Skip to main content

Posts

ওইটা বাংলাদেশ, ওইটা বাংলাদেশ

দীর্ঘ ২৮ ঘন্টার যাত্রাপথ। মনে মনে তৈরী হয়ে নিয়েছিলাম আরেকটা দীর্ঘ ক্লান্তিকর ভ্রমণ অভিজ্ঞতার জন্য। আমার রাউট ছিলো ড্যালাস- ফ্র্যাঙ্কফোর্ট – বাহারাইন – ঢাকা। ড্যালাস থেকে আমার যাত্রাসঙ্গী ছিলো এক কালো জাপানি লোক। সে আমি ঘুমালেই আমার ব্ল্যাঙ্কেট ঠিক ঠাক করে দেয়। প্রথমবার ভাবলাম- কেয়ারিং সহযাত্রী। দ্বিতীয়বার মনে হল এই লোকের সমস্যাটা কি?? তার বসতে অসুবিধা হলে পাশের দুটো সিট তো খালি...  আমার সামনে বসেছিলো এক বিশালদেহী আমেরিকান,- সে ভাইয়ের পরিবারকে সাহায্য করছিলো ফ্র্যাঙ্কফোর্ট যেতে। আমি তার সাথে ভাব জমিয়ে ফেললাম অনেকটা ক্রিপি জাপানীজকে একটু সমঝানোর জন্যই। একটু কথার পরই সে আমাকে তার কান্ট্রি হাউসে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেললো। আমি মনে মনে “আলহামদুলিল্লাহ!!” বলে কেটে পড়লাম। ১০ ঘন্টার ফ্লাইটে আর কতক্ষণ জেগে থাকা যায়!! একটু পর আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাংলো ক্রিপি জাপানীজের ডাকে। ঘুম ভাঙ্গিয়ে জিজ্ঞেস করে – “ হাউ ইয়্যু ডুয়িং? “ আমি তাকে ভস্ম করে ফেলব টাইপ একটা দৃষ্টি দেয়ার চেষ্টা করে সুবিধা করতে পারলাম না । সে বলে তুমি কী জাপানিজ মুদ্রা চাও? হঠাত ঘুম ভাংলে আমার মাথা কাজ করে না, আমি কেবল ঘাড়...

কলাইডোস্কোপে ২০১০

সেই ইমেইলটা লেখার দিন ঘনিয়ে আসছে। গত প্রায় দু'বছর ধরে অপেক্ষা করেছি কেবল এই ইমেইলটা লেখার। মনে মনে কত খসড়া এঁকেছি। বড় আজব মানুষের মন। আজ লিখতে বসে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। মনের মাঝে ভিড় করছে গত তিন বছর ৯ মাসের অজস্র স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়া সহকর্মীর মুখ। আমার ছোটু ৮' x ১২' কিউব হয়তো কাল থেকে আর কেউ অগোছলো করবে কিংবা করবে না। আমার লাল- কালো ব্যাজটা রিসাইকেলড হয়ে যাবে। এ্যকসেস কার্ড দিয়ে আর কোন দরজা খুলবে না। কোন সহকর্মীর বিদায় দিনে আমরা সবাই মিলে কোথাও খেতে যেতাম। কিন্তু আমাকে বিদায় দেয়ার কেউ নেই। আমিই শেষজন। খুব অদ্ভুত লাগছে। জীবন খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ক'দিন আগেই ছাত্রজীবনের ইতি টেনে দিলাম। আর কোন কোথাও পেশা  ছাত্র লিখতে পারবো না। আমার ডেমোগ্রাফিক বদলে গেল।  সময়টাই অদ্ভুত। মাঝে মাঝে নতুন ডেমোগ্রাফিটাকে  দারূণ রোমাঞ্চকর মনে হয় - আবার ভয় ও লাগে। জীবনে ছাত্রত্ব ছাড়া তো আর কিছুই তেমন করিনি। এই লেবেলটা সেই ৪ বছর বয়স থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি -  এটাই আমার পরিচয় হয়ে গিয়েছে। এই ভয় থেকেই একবার ছাত্রজীবনটা টেনে দীর্ঘ করার চিন্তা মাথায় এসেছিলো। কিন্তু জি.আর...

মনে মনে বহুদূর চলে গেছি

মনে মনে বহুদূর চলে গেছি-  যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয় জন্মেই হাঁটতে হয়। হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি। পথ তো একটা নয় –- তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধা। নদীর দু – প্রান্তের মূল একপ্রান্তে জনপদ অন্যপ্রান্ত জনশূণ্য। দুদিকেই কূল, দুদিকেই এপার-ওপার, আসা-যাওয়া, টানাপোড়ন – দুটো জন্মই লাগে। মনে মনে দুটো জন্মই লাগে । - শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ইন্টারভিউ

চাকুরি মেলায় যেতে আমার ভালই লাগে। যার সাথেই কথা বলি মনে হয় , " তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ" । আমাকে চাকরি দিতে না পারলে তাদের কোম্পানির ভবিষ্যত অন্ধকার। সাক্ষাত শেষে ধরায় দেয় নানা উপহার আর তাদের কোম্পানির পোর্টফোলিও এবং অনলাইন ঠিকানা। সেখানে গিয়ে রেজ্যুমি আপ্লোড করতে হয়। রেজ্যুমি পছন্দ হলে তারা ক্যাম্পাসে এসেই ইন্টারভিউ নেয়। আমার হাতে সময় খুব কম। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়।ছুটিটাকে ম্যাক্সিমাইজ করতে । একদিনে ৪টা ইন্টারভিউ দিলাম। এর মাঝে ৩ টাই আমাকে ফাইনাল রাউন্ড ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচন করলো। একটা পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে ফাইনাল রাউন্ড ইন্টারভিউ দিতে গেলাম হিউস্টোনে। ওরাই  প্লেনের টিকেট , হোটেল ভাড়া আর অনান্য খরচ দিলো।  আইটেনেরারিতে দেখলাম দেড় দিনের প্রোগ্রাম-  একটা সোশ্যাল ইভেন্ট  আর তিনটা ইন্টারভিউ। যাওয়ার দিন ড্যালাসে প্রচন্ড টর্নেডো।  আমি ভয়ে শেষ। বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য ক্যাব ভাড়া করলাম। আমি জীবনেও একা ক্যাবে উঠিনি। কেবলই মনে হচ্ছিলো  ক্যাবচালক আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে না তো !!! ক্যাবচালক বেশ আলাপী মানুষ। সে প্যালেস্টা...

মন বসে না পড়ার টেবিলে

আমি ভয়াবহ সিনিয়ারোটাইটিস রোগে আক্রান্ত। পরীক্ষা, প্রজেক্ট, ডেডলাইন কোন কিছুই আর বিচলিত করে না। পড়ার টেবিলে বসে দুনিয়ার সব বিষয়ে চিন্তা শুরু করি। বর্তমান চিন্তা - প্রায় সব বাংলা ছায়াছবিরই একটা করে ইংরেজী নাম থাকে। যেমন –“ সোনার নাও পবনের বৈঠা” ছবির ইংরেজী নাম “The innocent boatman” । ডিকন্সট্রাকশন থিওরি পড়তে বসে মনে হল- ইংরেজী ছবির বাংলা নাম রাখলে কেমন হয়? Shutter Island – আমি উন্মাদ; আপনি কী সুস্থ? The Matrix – সবুজ কোট কালো চশমা Juno – কাঁচা বাশেঁ ঘুণ Live free or die hard – খাইছি তোরে Terminator - মেশিন ম্যান Inception - ভাবে মন অকারণ Salt – বস্তির রানী সুরাইয়া The Expendables – আজরাইলের ভালবাসা The Aviator – উড়ে যায় বক পক্ষী Titanic – প্রেমের মরা জলে ডোবে না 2012 – কেয়ামত থেকে কেয়ামত The other Boolean girl – স্বামী নিয়ে যুদ্ধ High school musical – মন বসে না পড়ার টেবিলে Twilight - জ়্বীনের বাদশাহ্ সরফারাজ X-men – চন্দ্রবিন্দু মানব Forgetting Sarah Marshall – মনের মাঝে তুমি Face off – ছিল্লা কাইট্টা লবণ লাগায় দিমু Living L...

খাপছাড়া ৪

পোকার জোকার ছোটবেলায় বার্ষিক বনভোজন  অথবা পাড়ার  ছোটখাট অনুষ্ঠানে  আপুকে দেখতাম, সবসময়ই পুরস্কার পেত। চকলেট, টোস্টার, ইস্ত্রি আরো কত কি!!!  আমি কখনোই একটা কিছু জিততাম না।   কিন্তু টিকেট হাতে , এই বুঝি আমার নম্বর ডাকলো  এই উত্তেজনাটা দারূণ উপভোগ করতাম।  আর ড্র শেষে আপুকে খুবই হিংসা করতাম।  তাই লটো খেলায় আমার তেমন অগ্রহ  হয় নি। লটারি তে  আগ্রহ না থাকলেও ক্যাসিনোর ঝলমলে পরিবেশ আমার ভালো লাগে। টেক্সাসে  ক্যাসিনো নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার আকর্ষণ আরো বেড়েছে।  আর এখানে বাস করে টেক্সাস হোল্ডে'ম পোকার পারিনা  শুনে সবাই তাজ্জব। বন্ধুরা বেশ ঘটা করে শেখানো শুরু করলো। কেনা হলো পোকার চিপ্‌স। আমি হাল ছেড়ে দি , কিন্তু ওরা ছাড়ে না। তবে সপ্তাহ খানেকের মেহনতের পরে আমি জেতা শুরু করলাম। অগ্রহও বাড়তে লাগলো।   সপ্তাহে একদিন  পোকার না খেললে  ভালো লাগে না।  এর মাঝে একটা এ্যাপ নামালাম। আমি দিন রাত যখনই সময় পাই পোকার খেলা শুরু করলাম।  ক্লাসে, কাজের ফাঁকে, বন্ধুদের অড্ডায় কেবলই পোকার। সাহস করে একটা পোকার টুর্নামে...

এবারই প্রথম তুমি....

এবারই প্রথম তুমি ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷ এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷ ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি এখানে ছিলে না এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷ এবারই প্রথম তুমি৷ -নির্মলেন্দু গুণ