পোকার জোকার
ছোটবেলায় বার্ষিক বনভোজন অথবা পাড়ার ছোটখাট অনুষ্ঠানে আপুকে দেখতাম, সবসময়ই পুরস্কার পেত। চকলেট, টোস্টার, ইস্ত্রি আরো কত কি!!! আমি কখনোই একটা কিছু জিততাম না। কিন্তু টিকেট হাতে , এই বুঝি আমার নম্বর ডাকলো এই উত্তেজনাটা দারূণ উপভোগ করতাম। আর ড্র শেষে আপুকে খুবই হিংসা করতাম। তাই লটো খেলায় আমার তেমন অগ্রহ হয় নি।
লটারি তে আগ্রহ না থাকলেও ক্যাসিনোর ঝলমলে পরিবেশ আমার ভালো লাগে। টেক্সাসে ক্যাসিনো নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার আকর্ষণ আরো বেড়েছে। আর এখানে বাস করে টেক্সাস হোল্ডে'ম পোকার পারিনা শুনে সবাই তাজ্জব। বন্ধুরা বেশ ঘটা করে শেখানো শুরু করলো। কেনা হলো পোকার চিপ্স। আমি হাল ছেড়ে দি , কিন্তু ওরা ছাড়ে না। তবে সপ্তাহ খানেকের মেহনতের পরে আমি জেতা শুরু করলাম। অগ্রহও বাড়তে লাগলো। সপ্তাহে একদিন পোকার না খেললে ভালো লাগে না। এর মাঝে একটা এ্যাপ নামালাম। আমি দিন রাত যখনই সময় পাই পোকার খেলা শুরু করলাম। ক্লাসে, কাজের ফাঁকে, বন্ধুদের অড্ডায় কেবলই পোকার। সাহস করে একটা পোকার টুর্নামেণ্টেও নাম দিয়ে ফেললাম। কিন্তু বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি , মারামারি করে খেলার মজা, ভাব গম্ভীর পোকার টুর্নামেন্টে নেই। তাই প্রথমে জিতলেও, শেষমেষ বিরক্ত হয়ে হারতে শুরু করলাম।
মশা মশা মশা
ছোটবেলা থেকে মশার কমড় খেয়ে বড় হয়েছি। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, টিক, ওয়েস্টনাইল মশা কেউ কাবু করতে পাড়েনি। এখন বাইরে গেলেই ফিরছি মশার কামড় খেয়ে। শুরুতে তেমন পাত্তা দেইনি। কিন্তু সকালে উঠে দেখি হাত - পা টমেটোর মত লাল হয়ে ফুলে গেছে। এক ধরণের ভোঁতা ব্যাথা। ডাক্তার বলে- মশার কামড়; বরফ দাও। আমি বলি - "তুমি জানো আমি মশার দেশের মানুষ। এটা মশার কামড় হতেই পারে না।"
আমার অবিশ্বাস দেখে ডাক্তারের হাসি থামে না। শেষে আমাকে কিছু মশাড় কামড়ের উপর ভিডিও দেখালো। এক আমাজন ভ্রমণকারীর মতে মশা নাকি পিরানহার চেয়েও বেশী ভয়ানক!!!
অবস্থা এতই খারাপ - মানুষ বাইরে যাওয়ার আগে সুগন্ধি মাখে আমি মশা নিরোধোক স্প্রে করি। আর তীব্র গন্ধে নিজেরই মাথা ঘুরতে থাকে।
রোযা, ঈদ আর ধর্মান্ধতা
দিনগুলো বড্ড লম্বা। এত দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই এবার রোযা রাখা হয়নি। তবে আমার যুক্তি হল- রোযার প্রচলন হয়েছিলো অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভবের জন্য। আমি নিজে প্রায়ই অনাহারে থাকি। তাই আমার মত দুস্থ মানুষের কষ্ট বোঝার জন্যই অন্যদের রোযা রাখা উচিত।
রোযা না রাখলেও ইফতারি করতে মাঝে মধ্যে মসজিদে যেতাম। মসজিদে সাধারণত আমি কামিজ পরে যাই। আর দেশী পোষাক পড়লেই চুড়িটা, টিপটা পড়তে মন চায়। এটা দেখে এক ভারতীয় মহিলা এসে আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বসলো। টিপ নাকি হিন্দুরা পড়ে। মসজিদে টিপ পড়া হারাম। আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিল। আমি প্রথমে ঠান্ডা মাথায় মহিলাকে বোঝাতে চাইলাম- টিপ আমাদের সংস্কৃতির অংশ, এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক অবান্তর। কিন্তু মহিলা নাচার। শেষে আমি বিরক্ত হয়ে বললাম- আল্লাহ্র ঘরে আমি কীভাবে আসবো সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, তার এ বিষয়ে মাথা না ঘামালেই ভালো হয়।
ইদানীং এদেশেও ধর্মান্ধতা বাড়ছে। ফ্লোরিডার এক পাদ্রী নাকি কুরান পুড়িয়ে ৯/১১ এর শোক পালন করতে চায়। এ নিয়ে খবরে তোলপাড়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ত্থেকে তার সাথে মধ্যস্ততা করা হয়েছে। সেদিন আমি পার্কিং লটে, হঠাত দেখি পাশের ট্রাকের চালক হাত দিয়ে আমার দিকে গুলি করবার ভঙ্গি করছে। রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আমার মাথায় ছিলো একটা স্কার্ফ।
আমার কাছে ধর্ম একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ একমাত্র তখনই প্রযোয্য যখন কাউকে নিজ ধর্ম পালনে বাধা প্রাদান করা হয় অথবা কারো ধর্ম পালন অপরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ আমেরিকা আমার কাছে ভীষণ অপরিচিত। ধীরে ধীরে ধর্মান্ধতা , ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ
শেষ পর্যন্ত আমি দেশে যাওয়ার টিকেট কিনে ফেললাম। আগামী বছর জানুয়ারির শেষে দেশে যাচ্ছি। ৬ সপ্তাহের ছুটি। টিকেট টা হাতে পেয়ে অসম্ভব ভালো লাগছে। চেনা পরিচিত , অর্ধ পরিচিত যাকে পাই তাকেই বলি -" জানো আমি দেশে ফিরছি।" সবাই ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে আমার যন্ত্রণায়। প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে যেতেই মনের মধ্যে ভর করেছে অজানা আশংকা ।
জানি - দূর থেকে মিস্ করার রোমান্টিকতার মতই তীব্র কাছ থেকে আশাহত হওয়ার বেদনা।
ছোটবেলায় বার্ষিক বনভোজন অথবা পাড়ার ছোটখাট অনুষ্ঠানে আপুকে দেখতাম, সবসময়ই পুরস্কার পেত। চকলেট, টোস্টার, ইস্ত্রি আরো কত কি!!! আমি কখনোই একটা কিছু জিততাম না। কিন্তু টিকেট হাতে , এই বুঝি আমার নম্বর ডাকলো এই উত্তেজনাটা দারূণ উপভোগ করতাম। আর ড্র শেষে আপুকে খুবই হিংসা করতাম। তাই লটো খেলায় আমার তেমন অগ্রহ হয় নি।
লটারি তে আগ্রহ না থাকলেও ক্যাসিনোর ঝলমলে পরিবেশ আমার ভালো লাগে। টেক্সাসে ক্যাসিনো নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার আকর্ষণ আরো বেড়েছে। আর এখানে বাস করে টেক্সাস হোল্ডে'ম পোকার পারিনা শুনে সবাই তাজ্জব। বন্ধুরা বেশ ঘটা করে শেখানো শুরু করলো। কেনা হলো পোকার চিপ্স। আমি হাল ছেড়ে দি , কিন্তু ওরা ছাড়ে না। তবে সপ্তাহ খানেকের মেহনতের পরে আমি জেতা শুরু করলাম। অগ্রহও বাড়তে লাগলো। সপ্তাহে একদিন পোকার না খেললে ভালো লাগে না। এর মাঝে একটা এ্যাপ নামালাম। আমি দিন রাত যখনই সময় পাই পোকার খেলা শুরু করলাম। ক্লাসে, কাজের ফাঁকে, বন্ধুদের অড্ডায় কেবলই পোকার। সাহস করে একটা পোকার টুর্নামেণ্টেও নাম দিয়ে ফেললাম। কিন্তু বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি , মারামারি করে খেলার মজা, ভাব গম্ভীর পোকার টুর্নামেন্টে নেই। তাই প্রথমে জিতলেও, শেষমেষ বিরক্ত হয়ে হারতে শুরু করলাম।
মশা মশা মশা
ছোটবেলা থেকে মশার কমড় খেয়ে বড় হয়েছি। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, টিক, ওয়েস্টনাইল মশা কেউ কাবু করতে পাড়েনি। এখন বাইরে গেলেই ফিরছি মশার কামড় খেয়ে। শুরুতে তেমন পাত্তা দেইনি। কিন্তু সকালে উঠে দেখি হাত - পা টমেটোর মত লাল হয়ে ফুলে গেছে। এক ধরণের ভোঁতা ব্যাথা। ডাক্তার বলে- মশার কামড়; বরফ দাও। আমি বলি - "তুমি জানো আমি মশার দেশের মানুষ। এটা মশার কামড় হতেই পারে না।"
আমার অবিশ্বাস দেখে ডাক্তারের হাসি থামে না। শেষে আমাকে কিছু মশাড় কামড়ের উপর ভিডিও দেখালো। এক আমাজন ভ্রমণকারীর মতে মশা নাকি পিরানহার চেয়েও বেশী ভয়ানক!!!
অবস্থা এতই খারাপ - মানুষ বাইরে যাওয়ার আগে সুগন্ধি মাখে আমি মশা নিরোধোক স্প্রে করি। আর তীব্র গন্ধে নিজেরই মাথা ঘুরতে থাকে।
রোযা, ঈদ আর ধর্মান্ধতা
দিনগুলো বড্ড লম্বা। এত দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই এবার রোযা রাখা হয়নি। তবে আমার যুক্তি হল- রোযার প্রচলন হয়েছিলো অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভবের জন্য। আমি নিজে প্রায়ই অনাহারে থাকি। তাই আমার মত দুস্থ মানুষের কষ্ট বোঝার জন্যই অন্যদের রোযা রাখা উচিত।
রোযা না রাখলেও ইফতারি করতে মাঝে মধ্যে মসজিদে যেতাম। মসজিদে সাধারণত আমি কামিজ পরে যাই। আর দেশী পোষাক পড়লেই চুড়িটা, টিপটা পড়তে মন চায়। এটা দেখে এক ভারতীয় মহিলা এসে আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বসলো। টিপ নাকি হিন্দুরা পড়ে। মসজিদে টিপ পড়া হারাম। আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিল। আমি প্রথমে ঠান্ডা মাথায় মহিলাকে বোঝাতে চাইলাম- টিপ আমাদের সংস্কৃতির অংশ, এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক অবান্তর। কিন্তু মহিলা নাচার। শেষে আমি বিরক্ত হয়ে বললাম- আল্লাহ্র ঘরে আমি কীভাবে আসবো সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, তার এ বিষয়ে মাথা না ঘামালেই ভালো হয়।
ইদানীং এদেশেও ধর্মান্ধতা বাড়ছে। ফ্লোরিডার এক পাদ্রী নাকি কুরান পুড়িয়ে ৯/১১ এর শোক পালন করতে চায়। এ নিয়ে খবরে তোলপাড়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ত্থেকে তার সাথে মধ্যস্ততা করা হয়েছে। সেদিন আমি পার্কিং লটে, হঠাত দেখি পাশের ট্রাকের চালক হাত দিয়ে আমার দিকে গুলি করবার ভঙ্গি করছে। রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আমার মাথায় ছিলো একটা স্কার্ফ।
আমার কাছে ধর্ম একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ একমাত্র তখনই প্রযোয্য যখন কাউকে নিজ ধর্ম পালনে বাধা প্রাদান করা হয় অথবা কারো ধর্ম পালন অপরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ আমেরিকা আমার কাছে ভীষণ অপরিচিত। ধীরে ধীরে ধর্মান্ধতা , ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ
শেষ পর্যন্ত আমি দেশে যাওয়ার টিকেট কিনে ফেললাম। আগামী বছর জানুয়ারির শেষে দেশে যাচ্ছি। ৬ সপ্তাহের ছুটি। টিকেট টা হাতে পেয়ে অসম্ভব ভালো লাগছে। চেনা পরিচিত , অর্ধ পরিচিত যাকে পাই তাকেই বলি -" জানো আমি দেশে ফিরছি।" সবাই ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে আমার যন্ত্রণায়। প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে যেতেই মনের মধ্যে ভর করেছে অজানা আশংকা ।
জানি - দূর থেকে মিস্ করার রোমান্টিকতার মতই তীব্র কাছ থেকে আশাহত হওয়ার বেদনা।
হাহাহা! statistically বলে দেয়া যায় বেশিরভাগ মানুষেরই পিকনিক লটারি ভাগ্য নাই। আমার সেটাও নাই। কারণ যেটুকু সম্ভাবনা থাকে, সেটার জোরেও কখনো শিকা ছিড়ল না। শতকরা ৫০ ভাও সম্ভাবনা থাকলেও দেখা যায় লটারি তে আমার নাম উঠে না :p
ReplyDeleteযাকগে, দেশে আসছ, হালকা মনে ঘুরে যাও। ছোটবেলার স্মৃতির জায়গা, ভালো লাগবেই। আর সময়ের সাথে তো সবকিছুই বদলায়। খুব বেশি আশা রাইখো না। তাহলে আর হতাশ হতে হবে না।