চাকুরি মেলায় যেতে আমার ভালই লাগে। যার সাথেই কথা বলি মনে হয় , " তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ" । আমাকে চাকরি দিতে না পারলে তাদের কোম্পানির ভবিষ্যত অন্ধকার। সাক্ষাত শেষে ধরায় দেয় নানা উপহার আর তাদের কোম্পানির পোর্টফোলিও এবং অনলাইন ঠিকানা। সেখানে গিয়ে রেজ্যুমি আপ্লোড করতে হয়। রেজ্যুমি পছন্দ হলে তারা ক্যাম্পাসে এসেই ইন্টারভিউ নেয়।
আমার হাতে সময় খুব কম। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়।ছুটিটাকে ম্যাক্সিমাইজ করতে । একদিনে ৪টা ইন্টারভিউ দিলাম। এর মাঝে ৩ টাই আমাকে ফাইনাল রাউন্ড ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচন করলো।
একটা পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে ফাইনাল রাউন্ড ইন্টারভিউ দিতে গেলাম হিউস্টোনে। ওরাই প্লেনের টিকেট , হোটেল ভাড়া আর অনান্য খরচ দিলো। আইটেনেরারিতে দেখলাম দেড় দিনের প্রোগ্রাম- একটা সোশ্যাল ইভেন্ট আর তিনটা ইন্টারভিউ। যাওয়ার দিন ড্যালাসে প্রচন্ড টর্নেডো। আমি ভয়ে শেষ। বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য ক্যাব ভাড়া করলাম। আমি জীবনেও একা ক্যাবে উঠিনি। কেবলই মনে হচ্ছিলো ক্যাবচালক আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে না তো !!!
ক্যাবচালক বেশ আলাপী মানুষ। সে প্যালেস্টাইন থেকে এসেছে। এখানে ম্যাকানিকাল ইঞ্জিয়ারিং এ পড়াশোনা করে সে কেন ক্যাব চালায় সেটাও একটা রহস্য। আমার নাম শুনেই সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি মুসলিম। এর পর সে কুরান থেকে আয়াত বলা শুরু করলো। আরো বললো সে বাড়ি গিয়ে আমার চাকরির জন্য প্রার্থনা করবে। সে সময় আমি ভীষণ নার্ভাস ছিলাম মন দিয়ে তার কথা শুনিনি। পরে মনে হল সে আমার মনকে অন্যদিকে সরানোর জন্যই এত কথা বলছিলো। আবার কুড়িয়ে পাওয়া ভালোবাসা। সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের কাছে ঋণী হয়ে যাওয়া।
বিমানবন্দর থেকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওরাই গাড়ি পাঠালো। হোটেলের চেহারা আর আমার রূম দেখে ভিড়মি খেলাম। নিজের টাকায় এ ধরণের হোটেলে কবে থাকতে পারবো কে জানে!!!
রবিবার বিকাল থেকেই শুরু হয়ে গেল ইন্টারভিউ। ওরা আমাদেরকে একটা স্থানীয় বোলিং ক্লাবে নিয়ে গেল সবার সাথে পরিচিত হবার জন্য। খুবই অনানুষ্ঠানিক। বেশ কিছু ম্যানেজার ও ছিলো। ওরা কোম্পানি কালচার সম্পর্কে আমাদের ধরণা দিল। ভালো লাগা- মন্দ লাগা জানালো। খেয়াল করলাম প্রত্যেকেই এখানে কাজ করে খুবই তৃপ্ত। ভেরাইযোনে আমি এটা কখনোই দেখি নাই।
পরিচয় হল স্ট্যানফোর্ডের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র এ্যলেক্স আর এম.আই. টির ছাত্র ক্রিসের এর সাথে। এদের সাথে প্রতিযোগিতা করে চাকরি পেতে হবে ভেবে মনে মনে বেশ মুষড়ে পরলাম। আমার ধরণা ছিলো আই.ভি লীগ স্কুলের ছাত্র হয়তো নাক উঁচু টাইপ হবে। কিন্তু দু'জনেই বেশ মিশুকে প্রকৃতির। এ্যলেক্স আমাকে বোলিং শিখি্যে দিল । আমি আগে সর্বশক্তি দিয়ে বোল করতাম। ও বুঝালো কিভাবে নিশানা ঠিক করে বোল করতে হয়। ঠিক করলাম দু'জনেই যদি চাকরি পেয়ে হিউস্টোনে থাকি তাহলে বোলিং রিম্যাচ হবে এবং আমি ওকে হারিয়ে দিবো।
সকালে অ্যালেক্সের দিকে এক পলক তাকিয়েই বুঝলাম রিম্যাচ কেবলই দুরাশা। গতরাতের হ্যাঙ্গোভার তার এখনও কাটেনি। সকালের নাস্তার পর আমাদের সবাইকে নিয়ে গেল ওদের অফিসে। একটা কনফারেন্স রুমে রাখলো সেখান থেকে কাজের ফাঁকে বিভিন্ন কর্মচারীরা এসে আমাদের সাথে কথা বলছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে আর একজন একজন করে ডেকে নিচ্ছে ইন্টারভিউয়ের জন্য।
আমার প্রথম ইন্টারভিউ হল টেরিসার সাথে। সে ড্যালাসেই থাকে কাজ করে ইউজেবিলিটি ডেভল্পমেন্টে। ও আমাকে একটা মজার প্রশ্ন করলো - যদি তোমাকে কোন নিয়ম ভাঙ্গতে বলা হয় ; তুমি কী করবে?
এরপর দুপুরের খাবার দেয়া হল বিশাল ব্যাঙ্কুয়েট হলে। টেরিসা এসে আমার পাশেই বসলো। এবার কথাবার্তা খুবই অনানুষ্ঠানিক। অন্য পাশে আরেক বয়স্ক ভদ্রলোক এসে বসলেন। তিনি আমাকে টুকটাক প্রশ্ন শুরু করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- "তুমি কোন গ্রুপে কাজ কর?"
- "আমি সব গ্রুপের জন্যই অল্প অল্প আজ করি।"
পাশ থেকে টেরিসা বললো - উনি কোম্পানির গ্লোবাল মার্কেটিং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট।
শুনে আমি তব্দা খেয়ে গেলাম। এরপর তিনি আর নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন।
পরের ইন্টারভিউ এক ভারতীয় মাহিলার সাথে। মহিলা প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো - "আমার দেশ কোথায়?" আমি একটু বিরক্ত বোধ করলাম। চাকরির ইন্টারভিউতে এই ধরনের প্রশ্ন করা যায় না। অন্যদের সাথে কথা বলে জানলাম সে নাকি প্রায় সবাইকেই এই প্রশ্ন করেছে।
পরের প্রশ্ন করলো - "আমি কোন ধরণের কাজে আগ্রহী? ডিজাইন না সাপোর্ট? "
আমি বললাম - " ডিজাইন। কারণ এতে ইনোভেশনের সুযোগ বেশী।'
মহিলা বলে -" তোমার কি ধরণা ? তোমার ডিজাইন করা এ্যাপের সাপোর্ট কে দিবে???"
বুঝলাম এই মহিলা নিশ্চয়ই সাপোর্টে কাজ করে। অন্যদের সাথে কথা বলে জানলাম মহিলা সবাইকেই হার্ড টাইম দিয়েছে। সবার ধরণা সে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতাকে আড়াল করতেই আক্রমণাত্মক আচরণ করেছে। এটা অভিবাসীদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়।
পরের ইন্টারভিউ জোসেফের বসের সাথে। জোসেফ ক্যাম্পাসে এসে আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিলো। ওকে দেখে যে কথাটা সবার প্রথমে মনে হয় - এই ছেলে জি.কিউ এর মডেল না হয়ে পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে কী করছে? জোসেফ কাজ করে তথ্য নিরাপত্তার উপর । আমার স্পেশালাইজেশনের বিষয়ও তাই। ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হল ভাল ভাবেই।
এর পর একটা ছোট্ট ক্লোজিং অনুষ্ঠান হল । সবাই আমাদেরকে আসার জন্য ধন্যবাদ দিল। রঅ্যাফেল ড্রতে আমি আই পড জিতে গেলাম। আমার পরের জন আই প্যাড জিতেছে দেখে একটু মন খারাপ হয়ে গেল ।
আমার হাতে সময় খুব কম। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়।ছুটিটাকে ম্যাক্সিমাইজ করতে । একদিনে ৪টা ইন্টারভিউ দিলাম। এর মাঝে ৩ টাই আমাকে ফাইনাল রাউন্ড ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচন করলো।
একটা পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে ফাইনাল রাউন্ড ইন্টারভিউ দিতে গেলাম হিউস্টোনে। ওরাই প্লেনের টিকেট , হোটেল ভাড়া আর অনান্য খরচ দিলো। আইটেনেরারিতে দেখলাম দেড় দিনের প্রোগ্রাম- একটা সোশ্যাল ইভেন্ট আর তিনটা ইন্টারভিউ। যাওয়ার দিন ড্যালাসে প্রচন্ড টর্নেডো। আমি ভয়ে শেষ। বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য ক্যাব ভাড়া করলাম। আমি জীবনেও একা ক্যাবে উঠিনি। কেবলই মনে হচ্ছিলো ক্যাবচালক আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে না তো !!!
ক্যাবচালক বেশ আলাপী মানুষ। সে প্যালেস্টাইন থেকে এসেছে। এখানে ম্যাকানিকাল ইঞ্জিয়ারিং এ পড়াশোনা করে সে কেন ক্যাব চালায় সেটাও একটা রহস্য। আমার নাম শুনেই সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি মুসলিম। এর পর সে কুরান থেকে আয়াত বলা শুরু করলো। আরো বললো সে বাড়ি গিয়ে আমার চাকরির জন্য প্রার্থনা করবে। সে সময় আমি ভীষণ নার্ভাস ছিলাম মন দিয়ে তার কথা শুনিনি। পরে মনে হল সে আমার মনকে অন্যদিকে সরানোর জন্যই এত কথা বলছিলো। আবার কুড়িয়ে পাওয়া ভালোবাসা। সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের কাছে ঋণী হয়ে যাওয়া।
বিমানবন্দর থেকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওরাই গাড়ি পাঠালো। হোটেলের চেহারা আর আমার রূম দেখে ভিড়মি খেলাম। নিজের টাকায় এ ধরণের হোটেলে কবে থাকতে পারবো কে জানে!!!
রবিবার বিকাল থেকেই শুরু হয়ে গেল ইন্টারভিউ। ওরা আমাদেরকে একটা স্থানীয় বোলিং ক্লাবে নিয়ে গেল সবার সাথে পরিচিত হবার জন্য। খুবই অনানুষ্ঠানিক। বেশ কিছু ম্যানেজার ও ছিলো। ওরা কোম্পানি কালচার সম্পর্কে আমাদের ধরণা দিল। ভালো লাগা- মন্দ লাগা জানালো। খেয়াল করলাম প্রত্যেকেই এখানে কাজ করে খুবই তৃপ্ত। ভেরাইযোনে আমি এটা কখনোই দেখি নাই।
পরিচয় হল স্ট্যানফোর্ডের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র এ্যলেক্স আর এম.আই. টির ছাত্র ক্রিসের এর সাথে। এদের সাথে প্রতিযোগিতা করে চাকরি পেতে হবে ভেবে মনে মনে বেশ মুষড়ে পরলাম। আমার ধরণা ছিলো আই.ভি লীগ স্কুলের ছাত্র হয়তো নাক উঁচু টাইপ হবে। কিন্তু দু'জনেই বেশ মিশুকে প্রকৃতির। এ্যলেক্স আমাকে বোলিং শিখি্যে দিল । আমি আগে সর্বশক্তি দিয়ে বোল করতাম। ও বুঝালো কিভাবে নিশানা ঠিক করে বোল করতে হয়। ঠিক করলাম দু'জনেই যদি চাকরি পেয়ে হিউস্টোনে থাকি তাহলে বোলিং রিম্যাচ হবে এবং আমি ওকে হারিয়ে দিবো।
সকালে অ্যালেক্সের দিকে এক পলক তাকিয়েই বুঝলাম রিম্যাচ কেবলই দুরাশা। গতরাতের হ্যাঙ্গোভার তার এখনও কাটেনি। সকালের নাস্তার পর আমাদের সবাইকে নিয়ে গেল ওদের অফিসে। একটা কনফারেন্স রুমে রাখলো সেখান থেকে কাজের ফাঁকে বিভিন্ন কর্মচারীরা এসে আমাদের সাথে কথা বলছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে আর একজন একজন করে ডেকে নিচ্ছে ইন্টারভিউয়ের জন্য।
আমার প্রথম ইন্টারভিউ হল টেরিসার সাথে। সে ড্যালাসেই থাকে কাজ করে ইউজেবিলিটি ডেভল্পমেন্টে। ও আমাকে একটা মজার প্রশ্ন করলো - যদি তোমাকে কোন নিয়ম ভাঙ্গতে বলা হয় ; তুমি কী করবে?
এরপর দুপুরের খাবার দেয়া হল বিশাল ব্যাঙ্কুয়েট হলে। টেরিসা এসে আমার পাশেই বসলো। এবার কথাবার্তা খুবই অনানুষ্ঠানিক। অন্য পাশে আরেক বয়স্ক ভদ্রলোক এসে বসলেন। তিনি আমাকে টুকটাক প্রশ্ন শুরু করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- "তুমি কোন গ্রুপে কাজ কর?"
- "আমি সব গ্রুপের জন্যই অল্প অল্প আজ করি।"
পাশ থেকে টেরিসা বললো - উনি কোম্পানির গ্লোবাল মার্কেটিং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট।
শুনে আমি তব্দা খেয়ে গেলাম। এরপর তিনি আর নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন।
পরের ইন্টারভিউ এক ভারতীয় মাহিলার সাথে। মহিলা প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো - "আমার দেশ কোথায়?" আমি একটু বিরক্ত বোধ করলাম। চাকরির ইন্টারভিউতে এই ধরনের প্রশ্ন করা যায় না। অন্যদের সাথে কথা বলে জানলাম সে নাকি প্রায় সবাইকেই এই প্রশ্ন করেছে।
পরের প্রশ্ন করলো - "আমি কোন ধরণের কাজে আগ্রহী? ডিজাইন না সাপোর্ট? "
আমি বললাম - " ডিজাইন। কারণ এতে ইনোভেশনের সুযোগ বেশী।'
মহিলা বলে -" তোমার কি ধরণা ? তোমার ডিজাইন করা এ্যাপের সাপোর্ট কে দিবে???"
বুঝলাম এই মহিলা নিশ্চয়ই সাপোর্টে কাজ করে। অন্যদের সাথে কথা বলে জানলাম মহিলা সবাইকেই হার্ড টাইম দিয়েছে। সবার ধরণা সে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতাকে আড়াল করতেই আক্রমণাত্মক আচরণ করেছে। এটা অভিবাসীদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়।
পরের ইন্টারভিউ জোসেফের বসের সাথে। জোসেফ ক্যাম্পাসে এসে আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিলো। ওকে দেখে যে কথাটা সবার প্রথমে মনে হয় - এই ছেলে জি.কিউ এর মডেল না হয়ে পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে কী করছে? জোসেফ কাজ করে তথ্য নিরাপত্তার উপর । আমার স্পেশালাইজেশনের বিষয়ও তাই। ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হল ভাল ভাবেই।
এর পর একটা ছোট্ট ক্লোজিং অনুষ্ঠান হল । সবাই আমাদেরকে আসার জন্য ধন্যবাদ দিল। রঅ্যাফেল ড্রতে আমি আই পড জিতে গেলাম। আমার পরের জন আই প্যাড জিতেছে দেখে একটু মন খারাপ হয়ে গেল ।
শেষ পর্যন্ত কি খবর?
ReplyDeleteখবর ভালো। চাকরি হয়েছে :D
ReplyDeleteআগামী গ্রীষ্মে হিউস্টোনে চলে যাচ্ছি।