ছোটবেলায় আমি খালি অসুস্থ হতাম। খেলাধূলাতে একেবারেই ভালো ছিলাম না। মা তাই বাসার কাছে বাফাতে (বুলবুল ললিতকলা একাডেমী - একে কেন বাফা বলা হয় তা এখনো বার করতে পারিনি !)ভর্তি করে দিল। তখন আমার বয়স চার কী পাঁচ। নাচের স্কুল উপলক্ষে আমাকে প্রথম বড়দের পোশাক সালোয়ার কামিজ কিনে দেয়া হয়েছিলো। সেই লাল টুকটুকে কামিজ পড়ে নাচের স্কুলে যাওয়ার জন্য অগের রাত থেকে আমার ভিতর বিপুল উত্তেজনা কাজ করতো। কখন শুক্রবার আসবে আর আমি কামিজ পড়তে পারবো!! যদিও নাচের ক্লাস তেমন ভালো লাগতো না , কিন্তু কামিজ পড়ার লোভে আমি লেগে রইলাম। প্রথম বছর আমাদের কেবল কিছু মুদ্রা শেখানো হত তবলার তালে তালে। রীতিমত বোরিং ব্যাপার। কিন্তু বড় আপুদের দেখতাম দারুণ সাজগোজ করে নাচতো। প্রায়ই তাদের বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানে সেখানে আমাদেরকে দেখতে যেতে বলা হত।
আমি তো দর্শক হতে চাইনা ওদের মত স্টেজে নাচতে চাই।
একদিন সুযোগ এসে গেল। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নৃত্যে অংশ গ্রহণের। দিন নেই , রাত নেই আমার অনুশীলন চলছে। সন্ধ্যায় মা আমাদেরকে টেবিলে পড়তে বসাতো। হঠাত টেবিল থেকে উঠে বলতাম-
'আমি একটু নেচে নেই ?'
শুরু হয়ে যেত - 'বড়ুই গাছে চড়ুই নাচে...♪♫'
কিংবা হুজুর এসেছে আরবী পড়াতে। আমি জাম্পিং জ্যাকের সাথে সাথে বলছি আলিফ, বা, তা ,সা...
এই নাচ উপলক্ষ্যে আমাকে একটা ঘুঙ্গুর (ভারী নুপূর) কিনে দেয়া হয়েছিলো। আমার সে কী আনন্দ! কিছুতেই পা থেকে ঘুঙ্গুর খুলবো না।ঘুঙ্গুরের রিনঝিন শব্দে নিজেকে রাণীর মত লাগতো।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে খুব ভোরে উঠে গিয়েছিলাম। আমাদের সবাইকে লাইন ধরে মালকোচা মেরে ধুতির মত করে শাড়ি পড়ানো হল। বিশাল শাড়ি ভাঁজ করে পড়াতে হয়েছিলো আমাকে। এর পর দেয়া হল চড়া মেকআপ। আমার বাড়িতে বাচ্চাদের জন্য সাজগোজ নিষিদ্ধ ছিলো। আমাদের ধরনা দেয়া হয়েছিলো যারা সাজগোজ করা ভালো না। জমকালো কস্টিঊম আর সাজের জন্যই নাচ আমার প্রিয় হয়ে গেল।
বাফায় নাচেরও বার্ষিক পরীক্ষা হত। দেখতে দেখতে আমারো নাচের পরীক্ষা সময় চলে এলো। ফাইনালের দিন গিয়ে দেখি অনুষ্ঠানের মত সবাই দারূন সেজে গুঁজে এসেছে। যাই হোক আমি প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে পরীক্ষা দিলাম এবং ফেল করলাম। ফলাফল হাতে পেয়ে মার কাছে খুব ঝারি খেয়ে ছিলাম মনে আছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি ভুল হয়েছিলো, কিন্তু নিজের কাছে খুব লজ্জা লাগছিলো। তাই ফলাফল পত্রটা লুকিয়ে ফেলেছিলাম। মা যতই জিজ্ঞেস করে, আমি বলি হারিয়ে গিয়েছে।
পরের বছর আমরা বাসা বদল করে ধানমন্ডি চারে চলে আসি। দূরে হয়ে যাওয়াতে, সে বছরই আমার নাচ শিক্ষার ইতি। নাচের ক্লাসে না গেলেও আমার নাচানাচি থামেনি। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নৃত্যে অংশ নেই পঞ্চম শ্রেনী পর্্যন্ত।
আমেরিকায় এসে আবার আমার নাচের শুরু। আরো দু-চার জনকে নিয়ে একটা নাচের দলও গড়ে ফেললাম। আন্তর্জার্্তিক ছাত্রদের যে কোন অনুষ্ঠানে, বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে আমরা হাজির। আস্তে আস্তে স্কুলের বাইরেও আমাদের নাম ছড়িয়ে পড়লো। ড্যালাসের যেকোন বাংলা অনুষ্ঠানে আমাদের ডাক পড়তে লাগলো। নাচের পোকাটা আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো।
এর মাঝে আমি তালিম নিয়ে পারস্য নাচ (ব্যালি ড্যান্স) আর সালসাও শিখে ফেললাম। কিন্তু আমার এখন পার্টনার আছে এমন যেকোন নাচ করা নিষেধ, তাই ভাবছি, আবার দেশীয় নাচটাই আবার শুরু করবো।
আমি তো দর্শক হতে চাইনা ওদের মত স্টেজে নাচতে চাই।
একদিন সুযোগ এসে গেল। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নৃত্যে অংশ গ্রহণের। দিন নেই , রাত নেই আমার অনুশীলন চলছে। সন্ধ্যায় মা আমাদেরকে টেবিলে পড়তে বসাতো। হঠাত টেবিল থেকে উঠে বলতাম-
'আমি একটু নেচে নেই ?'
শুরু হয়ে যেত - 'বড়ুই গাছে চড়ুই নাচে...♪♫'
কিংবা হুজুর এসেছে আরবী পড়াতে। আমি জাম্পিং জ্যাকের সাথে সাথে বলছি আলিফ, বা, তা ,সা...
এই নাচ উপলক্ষ্যে আমাকে একটা ঘুঙ্গুর (ভারী নুপূর) কিনে দেয়া হয়েছিলো। আমার সে কী আনন্দ! কিছুতেই পা থেকে ঘুঙ্গুর খুলবো না।ঘুঙ্গুরের রিনঝিন শব্দে নিজেকে রাণীর মত লাগতো।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে খুব ভোরে উঠে গিয়েছিলাম। আমাদের সবাইকে লাইন ধরে মালকোচা মেরে ধুতির মত করে শাড়ি পড়ানো হল। বিশাল শাড়ি ভাঁজ করে পড়াতে হয়েছিলো আমাকে। এর পর দেয়া হল চড়া মেকআপ। আমার বাড়িতে বাচ্চাদের জন্য সাজগোজ নিষিদ্ধ ছিলো। আমাদের ধরনা দেয়া হয়েছিলো যারা সাজগোজ করা ভালো না। জমকালো কস্টিঊম আর সাজের জন্যই নাচ আমার প্রিয় হয়ে গেল।
বাফায় নাচেরও বার্ষিক পরীক্ষা হত। দেখতে দেখতে আমারো নাচের পরীক্ষা সময় চলে এলো। ফাইনালের দিন গিয়ে দেখি অনুষ্ঠানের মত সবাই দারূন সেজে গুঁজে এসেছে। যাই হোক আমি প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে পরীক্ষা দিলাম এবং ফেল করলাম। ফলাফল হাতে পেয়ে মার কাছে খুব ঝারি খেয়ে ছিলাম মনে আছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি ভুল হয়েছিলো, কিন্তু নিজের কাছে খুব লজ্জা লাগছিলো। তাই ফলাফল পত্রটা লুকিয়ে ফেলেছিলাম। মা যতই জিজ্ঞেস করে, আমি বলি হারিয়ে গিয়েছে।
পরের বছর আমরা বাসা বদল করে ধানমন্ডি চারে চলে আসি। দূরে হয়ে যাওয়াতে, সে বছরই আমার নাচ শিক্ষার ইতি। নাচের ক্লাসে না গেলেও আমার নাচানাচি থামেনি। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নৃত্যে অংশ নেই পঞ্চম শ্রেনী পর্্যন্ত।
আমেরিকায় এসে আবার আমার নাচের শুরু। আরো দু-চার জনকে নিয়ে একটা নাচের দলও গড়ে ফেললাম। আন্তর্জার্্তিক ছাত্রদের যে কোন অনুষ্ঠানে, বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে আমরা হাজির। আস্তে আস্তে স্কুলের বাইরেও আমাদের নাম ছড়িয়ে পড়লো। ড্যালাসের যেকোন বাংলা অনুষ্ঠানে আমাদের ডাক পড়তে লাগলো। নাচের পোকাটা আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো।
এর মাঝে আমি তালিম নিয়ে পারস্য নাচ (ব্যালি ড্যান্স) আর সালসাও শিখে ফেললাম। কিন্তু আমার এখন পার্টনার আছে এমন যেকোন নাচ করা নিষেধ, তাই ভাবছি, আবার দেশীয় নাচটাই আবার শুরু করবো।
Comments
Post a Comment