Skip to main content

ফেলে আসা সময় আর ফেলে দেয়া লেখা

বহুদিন কিছু লেখা হয় না। মাঝে মাঝে যে কিছু লিখতে যে ইচ্ছা করে না তা নয়; হঠাত কখনো একটা দু'টা লাইন মাথায় ঝিলিক দিয়ে যায়, কখনো লিখে রাখি হাতের কাছের  কোন চির কূটে, নোটবুকের খোলা পাতায়।  সেটা কেবল একটা দুটা  খাপছাড়া শব্দই, কখনো সেগুলো পূর্ণ বাক্য হয়ে উঠে না । আর যদি কোন মতে দাড়ি (।) পর্যন্ত যেতে পারিও, সেটা অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে না। সেরকম কিছু ফেলে আসা সময়ের ফেলে দেয়া লেখা তুলে দিচ্ছি তোমার জন্য।

 ***
প্রেম করতে করতে অধৈর্য হয়ে মাঝে মাঝে ঝগড়া করি। আবার রাগ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে প্রেম করি।
 ***
আমার শহর ঢাকা। লোকে লোকারণ্য, গরম, ধূলো, ট্রাফিক জ্যাম, যত্রতত্র অবর্জনা, অপরিকল্পিত দোকানপাঠ...  এত্তকিছুর পরেও কোথায় যেন একটা মায়া আছে।

***
 আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১১ উদ্বোবধনী খেলা বাংলাদেশ বনাম ভারত। গ্যালারীতে বসে সরাসরি দেখলাম। বহুবছর পর মিরপুর স্টেডিয়াম এ গেলাম। প্রায় অর্ধ মাইল আগে থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। সবাই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিয়ে হাঁটছে। কেউ রঙ তুলি দিয়ে উল্কি আঁকছে, কেউ বাজাচ্ছে ভুভুজেলা, চারিদিকে উতসবের আমেজ। নিরাপত্তার খুব কড়াকড়ি ছিলো- সসস্ত্র র‍্যাব, আনসার, অনভ্যস্ত ঘোড়া সাওয়ার পুলিশও দেখলাম।  এর মাঝে সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের গাড়ির পেছনে বাসে চড়ে আসলো খেলোয়াড়রা। আমি, আমার হাতে বানানো পোস্টার নিয়ে রাস্তার পাশে লাফালাফি করলাম। সাকিব না দেখলেও , আশরাফুল প্রায় দিল মে চাক্কু টাইপ একটা হাসি দিলো।

এরপর দু'দফা দেহ তল্লাসীর পর স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারলাম। মাঠে তখন  দু'দলের  খেলোয়াররা অনুশীলন করছে। টেন্ডুল্কারকে চিনতে পারলাম। দূরবীন দিয়ে খুঁজে পেলাম সাকিবকে। স্টেডিয়ামে তখন তিল ধারনের জায়গা নেই।

***
আমার ছোট্টবেলার বন্ধু  শহীদ।  মোটাসোটা চশমা পড়া  শহীদ। আমাদের দস্যিপনার কাছে দিশাহারা। বাসা পাশাপাশি হওয়াতে ওদের বাসায় প্রায়ই যাওয়া হত।  ইন্টারের কিছু পরেই  শহীদ পড়তে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যায় । কিন্তু ও এত্ত ঘন ঘন দেশে আসত যে মনেই হত না  যে ও দেশের বাইরে থাকে।

শহীদের কাছেই প্রথম  জেনা  জেমিসনের ডিভিডি দেখি। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও ওর তেমন  পরিবর্তন দেখিনি। আগের মতই মাথা মোটা।  আমাদের জ্বলায় খুব বেশী কথা বার্তার সুযোগ পেত না। মাঝেমাঝে ফেসবুকে দেখতাম লাস্যময়ী তরুণীদের সাথে অন্তরংগ ছবি।  আমাদের শহীদও তাইলে মেয়ে পটাতে পারে !!!! 

২০০৮ এ দেশে গেলাম।  ততদিনে শহীদ দেশে স্থায়ী হয়েছে। পারিবারিক ব্যাবসায় যোগ দিয়েছে। পাকা ব্যাবসায়ীর মত কথা বলে। দেশে প্রথম কল সেন্টার চালু করবে, এটা করবে সেটা করবে- এসব  নিয়ে একদফা লেকচার দিয়ে দিল। আমিও হাই তুলতে তুলতে শুনলাম।
 আমাকে খাওয়াতে নিয়ে গেল পিজ্জা হাটে।  অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম - ও  বয়স্ক  ড্রাইভার, দারোয়ান সবাই কে তুই তুকারি করছে আর তারাও ওকে সালাম দিয়ে; স্যার  স্যার বলছে। আসার সময় আবার এদের সবাইকে বড় টিপস্‌ও দিলো। 
শহীদের হাবভাব কী বড়দের মত!!!! আমি তব্দা খেয়ে যাই।

কিছু দিন পর শুনি আন্টি মারা গিয়েছেন। তার কয়েক মাস পরে শুনলাম শহীদ বিয়ে করেছে।  ওর বাউ নাকি খুব নামাজী।  বোরকা পরে।  যাক শহীদটার একটা গতি হল!!! ভাবি মানুষের কতই না পরিবর্তন হয়।

মাঝে মাঝে  এম. এস.এনে  কথা হয়।
ও খুব উতসাহ নিয়ে ব্যবসার গল্প করে। আমি জিজ্ঞেস করি-
কীরে? তোর  বঊ কেমন?
-ও বলে আলহামদুল্লিহ !!!

কথা আর বাড়ে না।   আমিও ভুলে যাই।

আবার এম. এস.এনে টোকা।
আমার ছেলে হয়েছে। ছবি দেখায় ফুটফুটে একটা বাচ্চা পিট পিট করে তাকিয়ে আছে।  খুবই কিউট।
এবার আমি বলি  আলহামদুল্লিল্লাহ !!

অনান্য বন্ধুদের কাছে শুনি শহীদের দ্বিতীয় জীবনের কথা।  আমার বিশ্বাস হয় না। একদিন  ঠাট্টাচ্ছালে জিজ্ঞেস করি -
-তুই তো দেখি হোমরা চোমরা ব্যাবসায়ী হয়ে গেলি রে। তা তোর মিসট্রেস কয়জন???
শহীদ সিরিয়াস ভাবে বলে  ১ জন।
আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে যাই।
শহীদ বলে চলে  বুঝিসই তো শাহানাকে নিয়ে তো আর সব জায়গায় যাওয়া যায় না......।


Comments

  1. ব্লগটার নাম যদিও এলোমেলো কিন্ত এর ভাবনা গুলি এলোমেলো না।

    ReplyDelete
  2. কই! ভাবনাগুলো-তো এলোমেলো না, বরং বেশ গোছালোই মনে হচ্ছে।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

জেনে শুনে বিষ করেছি পান

জেনে শুনে বিষ করেছি পান আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান প্রাণেরও আশা ছেড়ে সপেঁছি প্রাণ যতই দেখি তারে ততই দহি আপনো মনো জ্বালা নিরবে সহি , তবু পারিনে দুরে যেতে, মরিতে আশে লহিবো বুক পেতে অননও বান। জেনে শুনে বিষ করেছি পান আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান । যতই হাসি দিয়ে দহনও করে ততই বাড়ে তৃষা প্রেমেরও তরে - প্রেমও অমৃত ধারা যতই যাচি ততই করে প্রাণে অশনি দ্বান। আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান প্রাণেরও আশা ছেড়ে সপেঁছি প্রাণ আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান । - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমি জেনে শুনে বিষ আজকে আমার আমেরিকা জীবনের চার বছর পূর্ণ হল। আমেরিকা বা বাংলাদেশ কোনটাই আমার কাছে বিষ নয় বরং গলার মাঝে আটকে থাকা বাষ্পের মত। এই বাষ্প কখনো আমেরিকা; আবার কখনো বাংলাদেশ। বড় অদ্ভূত এই টানা পোড়ন - ঠিক এই গানটার মত।