আমেরিকার আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের মাঝে গোস্ট ডান্স (ভূতের নাচ) বিশ্বাস ব্যাবস্থার প্রচলন হয় ১৮৮০ সালের দিকে। আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের তাদের নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখানে তাদেরকে সরকার থেকে বার্ষিক ভাতা হিসাবে খাবার দেয়া হত। কিন্তু সরকারি কর্মচারীরা এসব বিক্রি করে দিত। ইন্ডিয়ানরা প্রায়ই থাকত অনাহারে। না খেতে পেয়ে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিলো খুবই কম। এসব পুনর্বাসন এলাকায় দেখা দিত কালা জ্বর, কলেরা সহ নানা অসুখ। সে সময় এসব রোগের তেমন কোন সুচিকিত্সা ছিলো না । আর ওষুধ যোগাড় করা ছিলো তাদের ক্ষমতার বাইরে। কবিরাজের জুড়িবুটিতে কোন লাভ হচ্ছিলোনা। আর সমতলের সাদাদের ওষুধের উপর তাদের আস্থা ছিলো না। বাঁচার জন্য ইন্ডিয়ানরা তাদের সন্তানদের পাঠিয়ে দিত দূরের মিশনারী আবাসিক স্কুলে। সেখানে ইন্ডিয়ান শিশুদের দেয়া হত নতুন নাম, শিখানো হ্ত ইউরো- আমেরিকান সমাজ ব্যবস্থা, দীক্ষা দেওয়া হত খ্রীষ্ট ধর্মে।
আদিবাসী ইন্ডিয়ানরা কোনভাবেই আর তাদের পুরানো জীবন বিধি ধরে রাখতে পারছিলো না; আবার ইউরো- আমেরিকান সমাজ ব্যাবস্থায় খাপ খাওয়ানোও সম্ভব হচ্ছিলো না। এমনই কঠিন সময় এক ইন্ডিয়ান, ওওকা (wovoka) স্বপ্নে দেখে মৃত ইন্ডিয়ানরা আবার নতুন করে ফিরে আসছে। তাদের কোন অসুখ নাই, সবাই সুস্থ এবং সুখী। সেসময়কার ইন্ডিয়ানদের মাঝে কোন পাপ-পুন্য বা স্বর্গ নরকের ধারণা ছিলো না। তাই গোস্ট ডান্স বিশ্বাস ব্যাবস্থার অনেক উপাদানই খ্রীষ্ট ধর্ম থেকে নেয়া।
গোস্ট ডান্স বিশ্বাস ব্যাবস্থার অনুসারীরা বিশ্বাস করতো সর্বশক্তিমান তাদেরক শাস্তি দেয়ার জন্য সাদাদের পাঠিয়েছে। পুনর্বাসন এলাকাতে তাদের শাস্তি মেয়াদ শেষ হবে বসন্তে, যখন গাছে নতুন পাতা আসবে। তার ঠিক আগে সাদাদের ভাসিয়ে নিতে, আসবে এক মহাপ্লাবন। সে পর্যন্ত পূর্ব পাপমোচনের জন্য তাদেরকে এক বিশেষ নাচ করতে হবে। নাচ শেষে তারাও ওওকার মত স্বপ্নে মৃতদের দেখতে পাবে আর পাবে গোস্ট শার্ট। এই শার্ট তাদেরকে সাদাদের বুলেটের হাত থেকে রক্ষা করবে। তারা হবে বাতাসের মত হাল্কা আর অদৃশ্য, বাফেলোর মত শক্তিমান, চিতার মত ক্ষিপ্র।
সরকারী রক্ষী বাহিনী ইন্ডিয়ানদের এই বিশ্বাসকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি। অদৃশ্য ইন্ডিয়ানরা ছিলো ভীষণ ভয়ঙ্কর। এরা মানুষ খেতো, যেকোন অত্যাচার সহ্য করতে পারতো এবং বন্দীদেরকে নিয়ে নিজেদের গোত্রে প্রতিস্থাপন করতো। ধরণা করা হয় ইন্ডিয়ানরাই সবচেয়ে সফল ভাবে ব্রেইন ওয়াস করতে পারত। প্রচন্ড অত্যাচারে মাধ্যমে বন্দীদের পুরানো পরিচয় ভুলিয়ে দিত; তারপর তাদেরকে দিয়ে নিজের মৃত আত্মী্যদের প্রতিস্থাপন করত। অবাক করা ব্যাপার হল সুযোগ পেলেও বেশীরভাগ প্রতিস্থাপিত সাদা মহিলারা আর ইউরো আমেরিকান সমাজে ফিরে যেতে চাইতো না। ইন্ডিয়ান সমাজে মহিলারা ছিলো অত্যন্ত স্বাধীন ও ক্ষমতাবান, যা সেসময়ের ইউরো-আমেরিকান মহিলাদের প্রায় গৃহবন্দী জীবনের চেয়ে অনেক লোভনীয়।
গোস্ট ডান্স অনুসারীদের সাথে রক্ষী বাহিনীর প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকত। ১৮৯০ সালের শীতকালে রক্ষী বাহিনীর সাথে এক যুদ্ধে মারা যায় স্যু গোত্রের ধর্মীয় নেতা সিটিং বুল। স্যুরা ছিলো শিকারী জাতি, গেরিলা আক্রমণে ভীষণ পটু এবং গোস্ট ডান্স বিশ্বাসের একনিষ্ঠ অনুসারী। সিটিং বুলের মৃত্যুতে স্যুরা মরিয়া হয়ে উঠে। প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে রক্ষী বাহিনীর সাথে স্যুদের যুদ্ধ হয় উন্ডেড নি ক্রিকে (wounded Knee Crick)। এ যুদ্ধে দু পক্ষেরই অনেক ক্ষতি হয়। ১৮৯০ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর স্যুরা অত্মসমর্পনের দিন ঠিক করে। রক্ষী বাহিনীও তৈরী হয় সে অনুযায়ী।
কিন্তু অত্মসমর্পনের দিন সকাল বেলা স্যু কবিরাজ, - হলুদ পাখি (Yeallow Bird), ঈগল হাড়ের বাঁশী বাজাতে বাজাতে, টিপির পাশের মাটিতে ফুঁ দিতে থাকে। হতচকিত স্যু যোদ্ধারা অস্ত্র হাতে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি চালায় রক্ষী বাহিনীর উপর। রক্ষী বাহিনীও পালটা আক্রমণ করে। গোস্ট শার্ট, স্যুদেরকে বুলেট থেকে রক্ষা করতে পারে না। এ যুদ্ধেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গোটা স্যু জাতি এবং সেই সাথে গোস্ট ডান্স বিশ্বাস ব্যবস্থা।
**তথ্য সূত্র:
• Peoples and Nation
• Our National Heritage
• Dr. Euignious Pollak
•** ছবিঃ Haward Terpning
প্রথম প্রকাশ : সচলায়তন ০৫-১৮-২০১০
আদিবাসী ইন্ডিয়ানরা কোনভাবেই আর তাদের পুরানো জীবন বিধি ধরে রাখতে পারছিলো না; আবার ইউরো- আমেরিকান সমাজ ব্যাবস্থায় খাপ খাওয়ানোও সম্ভব হচ্ছিলো না। এমনই কঠিন সময় এক ইন্ডিয়ান, ওওকা (wovoka) স্বপ্নে দেখে মৃত ইন্ডিয়ানরা আবার নতুন করে ফিরে আসছে। তাদের কোন অসুখ নাই, সবাই সুস্থ এবং সুখী। সেসময়কার ইন্ডিয়ানদের মাঝে কোন পাপ-পুন্য বা স্বর্গ নরকের ধারণা ছিলো না। তাই গোস্ট ডান্স বিশ্বাস ব্যাবস্থার অনেক উপাদানই খ্রীষ্ট ধর্ম থেকে নেয়া।
গোস্ট ডান্স বিশ্বাস ব্যাবস্থার অনুসারীরা বিশ্বাস করতো সর্বশক্তিমান তাদেরক শাস্তি দেয়ার জন্য সাদাদের পাঠিয়েছে। পুনর্বাসন এলাকাতে তাদের শাস্তি মেয়াদ শেষ হবে বসন্তে, যখন গাছে নতুন পাতা আসবে। তার ঠিক আগে সাদাদের ভাসিয়ে নিতে, আসবে এক মহাপ্লাবন। সে পর্যন্ত পূর্ব পাপমোচনের জন্য তাদেরকে এক বিশেষ নাচ করতে হবে। নাচ শেষে তারাও ওওকার মত স্বপ্নে মৃতদের দেখতে পাবে আর পাবে গোস্ট শার্ট। এই শার্ট তাদেরকে সাদাদের বুলেটের হাত থেকে রক্ষা করবে। তারা হবে বাতাসের মত হাল্কা আর অদৃশ্য, বাফেলোর মত শক্তিমান, চিতার মত ক্ষিপ্র।
সরকারী রক্ষী বাহিনী ইন্ডিয়ানদের এই বিশ্বাসকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি। অদৃশ্য ইন্ডিয়ানরা ছিলো ভীষণ ভয়ঙ্কর। এরা মানুষ খেতো, যেকোন অত্যাচার সহ্য করতে পারতো এবং বন্দীদেরকে নিয়ে নিজেদের গোত্রে প্রতিস্থাপন করতো। ধরণা করা হয় ইন্ডিয়ানরাই সবচেয়ে সফল ভাবে ব্রেইন ওয়াস করতে পারত। প্রচন্ড অত্যাচারে মাধ্যমে বন্দীদের পুরানো পরিচয় ভুলিয়ে দিত; তারপর তাদেরকে দিয়ে নিজের মৃত আত্মী্যদের প্রতিস্থাপন করত। অবাক করা ব্যাপার হল সুযোগ পেলেও বেশীরভাগ প্রতিস্থাপিত সাদা মহিলারা আর ইউরো আমেরিকান সমাজে ফিরে যেতে চাইতো না। ইন্ডিয়ান সমাজে মহিলারা ছিলো অত্যন্ত স্বাধীন ও ক্ষমতাবান, যা সেসময়ের ইউরো-আমেরিকান মহিলাদের প্রায় গৃহবন্দী জীবনের চেয়ে অনেক লোভনীয়।
গোস্ট ডান্স অনুসারীদের সাথে রক্ষী বাহিনীর প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকত। ১৮৯০ সালের শীতকালে রক্ষী বাহিনীর সাথে এক যুদ্ধে মারা যায় স্যু গোত্রের ধর্মীয় নেতা সিটিং বুল। স্যুরা ছিলো শিকারী জাতি, গেরিলা আক্রমণে ভীষণ পটু এবং গোস্ট ডান্স বিশ্বাসের একনিষ্ঠ অনুসারী। সিটিং বুলের মৃত্যুতে স্যুরা মরিয়া হয়ে উঠে। প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে রক্ষী বাহিনীর সাথে স্যুদের যুদ্ধ হয় উন্ডেড নি ক্রিকে (wounded Knee Crick)। এ যুদ্ধে দু পক্ষেরই অনেক ক্ষতি হয়। ১৮৯০ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর স্যুরা অত্মসমর্পনের দিন ঠিক করে। রক্ষী বাহিনীও তৈরী হয় সে অনুযায়ী।
কিন্তু অত্মসমর্পনের দিন সকাল বেলা স্যু কবিরাজ, - হলুদ পাখি (Yeallow Bird), ঈগল হাড়ের বাঁশী বাজাতে বাজাতে, টিপির পাশের মাটিতে ফুঁ দিতে থাকে। হতচকিত স্যু যোদ্ধারা অস্ত্র হাতে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি চালায় রক্ষী বাহিনীর উপর। রক্ষী বাহিনীও পালটা আক্রমণ করে। গোস্ট শার্ট, স্যুদেরকে বুলেট থেকে রক্ষা করতে পারে না। এ যুদ্ধেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গোটা স্যু জাতি এবং সেই সাথে গোস্ট ডান্স বিশ্বাস ব্যবস্থা।
**তথ্য সূত্র:
• Peoples and Nation
• Our National Heritage
• Dr. Euignious Pollak
•** ছবিঃ Haward Terpning
প্রথম প্রকাশ : সচলায়তন ০৫-১৮-২০১০
Comments
Post a Comment