Skip to main content

এলোমেলো দিনলিপি ০৯

চারপাশের সব কিছু  - পরিবেশ, মানুষ, অর্থনীতি খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল।  এত্ত পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। কেবন মনে হচ্ছে , পথে যদি একটু তিষ্টোতে পারতাম। এর মাঝে নিজেকে অরগ্যান দাতা হিসাবে তালিকাভুক্ত করলাম। সোনামনির অসুস্থতার পর থেকে মনে হচ্ছে ,  reuse, reduce, recycle. মানুষও হয়তো রি সাইকেল যোগ্য। রি- সাইকেলের কী কোন বাংলা আছে??? পুনঃব্যবহার????
শুনলেই বংগ বাজারের সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটের কথা মনে হয় !  তবে এখন একটু ভয় লাগছে , সবাই যখন  খুব স্মার্টলি বেহেশতে যাবে ... আমি যাব অরগ্যান ছাড়া। খুব বেশী সুখকর ভাবনা না!
কদিন আগে রেডিও তে শুনলাম, অরগ্যান পাওয়ার নিয়ম কানুনে পরিবর্তন আসছে। আগে, আগে আসিলে আগে পাইবে  ভিত্তিতে অরগ্যান দেয়া হত। এতে হয়তো ৩০ বছরেরে কিডনি প্রতিস্থাপণ করা হত ৮০ বছরের কারোর দেহে আথবা উল্টোটা । সে হয়তো বাঁচবে বড় জোর আর ৫ বছর।  নতুন নিয়মে সবচেয়ে বেশী বাঁচার সম্ভবনা যার তাকেই দেয়া হবে সেরা অরগ্যানটা। একজন অরগ্যান দাতা হিসাবে আমি নতুন নিয়মটা  আমা্র কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। আমি অবশ্যই চাইবো আর কারো মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী সময় বেঁচে থাকতে। কিন্তু  খুব প্রিয় কারো  যদি কখনো কোন অরগ্যানের প্রোয়োজন হয় তখন নিশ্চয়ই এই নিয়মকে অনৈতিক মনে হবে।

জীবনে প্রথম ইন্টারভিউ নিলাম। যদিও প্রশীক্ষণ দেয়া হয়েছিলো কিভাবে প্রার্থী বাছাই করতে হয়। কিভাবে প্রশ্ন করতে হয়। তবুও ভয় লাগছিলো প্রথমে।  তারপর দেখলাম কথার পিঠে ভালোই প্রশ্ন করে পারছি।  আমার সাথে আরো দু'জন ছিলো। একজন সবচাইতে নিরাপদ প্রার্থীকেই নির্বাচন করবে। আমি আর যোশেফ  তুলনা মূলক ভাবে রিস্কি প্রার্থীকেই  চূড়ান্ত করলাম, যে হয়ত ভুল করবে, কিন্তু এই ভুল থেকে শিখতে পারলে বহু ডুর যাবে। দেখা যাক কেমন  হয়।

প্রায় আড়াই মাস হলো , মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। মাছ এখনো খাই অবশ্য। টেক্সাসে মাংশ না খাওয়াটা খুবই অসুবিধাজনক।  বেশিরভাগ দোকানেই সবজি আইটেম থাকে হাতে গোনা দু- একটা। মাছেরও খুব বেশি প্রকারভেদ নেই। স্যমন, তেলাপিয়া, ক্যাটফিশ মোটামোটি সহজলভ্য দাম মাংশের চেয়ে বেশী হলেও আয়ত্তের মধ্যে। সীব্যাস আর ফ্লাউন্ডারের দাম অস্বাভাবিক বেশি। আর বাকী থাকলো ডিম আর দুধ !
মাংশ খেতে ইচ্ছা না করলেও, ভালো প্রোটিনের অভাব বোধ করছি। মাছ রান্না দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার আর ডাল আর বিন খেয়ে পুরো প্রোটিনের অভাব পূরণ হয় না। টফুর আর রাবারের স্বাদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই।


এবছর ভালোই ঘুরাঘুরি  হয়েছে। মাড়ডি গ্রা দেখলাম নিউ অরলিন্স গিয়ে। আমার প্রত্যাশা আরেকটু বেশী ছিল। আসলে গুরুজনদের সাথে যাওয়ায় পুরো আমেজটা পাইনি। তার পরেও  মালা কুড়াতে আর প্যাড়েড দেখতে খুবই ভালো লেগেছে।

গ্রীষ্মে গেলাম ওয়াশিংটনে। মাউন্ট অলিম্পিক, রেনিয়ার, নারাডা জলপ্রপাত,  রুবি সমুদ্র তীর  সব মিলিয়ে অসম্ভব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা একটা জায়গা। এখানেই প্রথম বরফের মধ্যে পাহাড়ে উঠলাম। আর আরামদায়ক উষনোতায়,  ধোয়া উঠা কফির মগ নিয়ে পাহারের চূড়ায় বরফ দেখার মজাই আলাদা।

ফলে দেড় দিনের ছোট্ট ট্রিপে আটলান্টার স্টোন মাউন্টেনে গেলাম আমেরিকার আদিবাসী (Indian Pow Wow) উত্সব দেখতে। গ্রানাইটের খোদাই করে , পাহাড়ের গায়ে বানানো বিশাল ভাস্কর্য। এখানে পাহাড় বেয়ে প্রায় ১.৫ মেইল নিচে নামলাম। অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

থ্যাঙ্কসগিভিং এর  ছুটিতে হূট করেই লস এঞ্জেলেস চলে গেলাম। এখানে সব ধরণের চিজি পর্যটক  কেন্দ্র দেখে ফেললাম। তবে সব চেয়ে ভালো লেগেছে - গেটি সেন্টার। গেটি সেন্টারের বিশাল ছবির সংগ্রহ,  নয়নাভিরাম বাগান,  গাইডেড ট্যুর,  রক্ষণা বেক্ষন - এককথায় অসাধারণ।  এর মাঝে আমার সব চেয়ে ভালো লেগেছে ক্লদ মনের সুর্যদয়ের ছবিগুলো। অদ্ভূত গভীরতা । কাছে থেকে কিছুই বোঝা যায় না কিন্তু দূর থেকে কত নিঁখুত সবকিছু !! ভাষায় প্রকাশের বাইরে।


ক্রিসমাসের ছুটিয়ে ৯ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে গেলাম ফ্লোরিডার ডেস্টিন বিচে। ঝকঝকে সবুজ পানি, আর চকচকে সাদা বালুর তীর।  খুবই নিরিবিলি। যদিও খুব ঠান্ডা ছিলো , তবে খুব শান্ত, স্নিগ্ধ এক জায়গা। 

আর টেক্সাসের মধ্য, স্যান এ্যন্টোনিয়োর  পাতাল গুহা  (caverns) ,  করপাস ক্রিস্টির সগার তীর, পাদ্রে দ্বীপ তো আছেই।  সব মিলিয়ে ২০১২ তে ঘুরাঘুরি হোয়েছে প্রচুর আর সে সাথে জমা হয়েছে অনেক মজার মজার সব অভিজ্ঞতা !!!

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।