Skip to main content

টোনা টুনির গল্প



এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল
-“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।”
শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে।
টুনি বলিল –
-“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস।
- টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।”
টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো।
তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল –
“তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।”
বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল।
টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন-
-“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।”
অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলিতে থাকিলেন - না খাইতে পারিয়া তাহার পুত্রের কিরূপ স্বাস্থ্যহানি হইয়াছে...”
এখানেও সুবিধা হইলো না দেখিয়া টুনি টিভিতে ফুড চ্যানেল দেখিয়াই ভাপা পিঠা তৈয়ারি শিখিবে মনস্থির করিল।

এদিকে টোনা বাজারে গিয়া ফর্দ দেখিয়া চালের গুড়া কিনিল, খেজুরের গুড় কিনিল, তেল ও উনুন কিনিল কিন্তু নারিকেল কোথাও দেখিল না। নারিকেলের পরিবর্তে টোনা ডাব কিনিল।
বাজার হাতে টোনাকে দেখিয়া বাঘ মামা তার পথ রোধ করিয়া বলিল
-“কি হে টোনা , এও বাজার কি জন্য?”
-“টুনি পিঠা বানাইবে মামা।”
-“আহা! বহুদিন পিঠা খাওয়া হয় নাই। আমি বিকালে তোমদের মামীকে লইয়া পিঠা খাইতে আসিব।”
-"অব্যশই মামা।"

বাজারের থলি খুলিয়া টুনির মাথায় হাত। এসব টোনা কি আনিয়াছে?
ডাব !!
চালের গুড়ার প্যাকেট টা খুলিতেই তাহা হইতে কিলবিল করিয়া পোকা বাহির হইতে লাগিল। পোকা দেখিয়া টুনির আর্তনাদে , পাশের বাড়ির শিশু গুলোও কান্না থামাইয়া চুপ হইয়া গেল। টোনা ঊর্ধশ্বাসে রান্না ঘরে গিয়া দেখে , চারিদিকে চালের গুড়া ছড়াইয়া সাদা হইয়া আছে, তার মাঝে এক চেয়ারে দাঁড়াইয়া, ডাব হাতে টুনি চিত্‌কার করিতেছে। টোনাকে দেখিয়াই টুনি তাহার দিকে ডাব নিক্ষেপ করিল। উহা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়ায় , নিরূপায় হইয়া নিজেকেই নিক্ষেপ করিল। অতঃপর চোখের পানি, নাকের জল একত্র করিয়া জানাইল চাউলের গুড়ায় পোকা; ইহা দ্বারা কোনভাবেই পিঠা হওয়া সম্ভব নয়। এর চেয়ে কি তাহারা দোকান হইতে কিনিয়া পিঠা খাইতে পারে না? টোনা ভাবিয়া দেখিল বুদ্ধি মন্দ নয়- নাহ! টুনিটা ইস্‌স্মার্ট আছে।

এরপর টোনাটুনি সাজিয়া গুজিয়া রেস্টুরেন্টে বসিয়া পিঠা খাইল, ফুটু তুলিল, ইতঃস্ত ঘোরাঘু্রি করিল। নীড়ে ফিরিয়া দেখিল, তাহাদের না পাইয়া অতিশয় ক্রুব্ধ বাঘ মামা একখানা হুমকি পত্র রাখিয়া গিয়াছে। এবার তো টোনাটুনি পড়িল মহা টেনশনে - এ বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় কি?
অনেক ভাবিয়া শেষে টোনা তাহাদের পিঠা ভোজনের ফুটুক গুলা ফেসবুকে আপ্লডিয়া বাঘ মামাকে ট্যাগ করিল...

অতঃপর...

Comments

Popular posts from this blog

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।