Skip to main content

এলোমেলো দিনলিপি (হাকুনা মা-টা-টা এডিশান)

একেকটা সময় আসে, সব কিছুই এলোমেলো লাগে। মনে হয় আমি এখানে কি করছি? আসলামই বা কিভাবে এখানে? আসলেই কি এখানে থাকার কথা আমার? সব কিছুই নতুন; নতুন শহর, নতুন চাকরি, নতুন বাসা, নতুন আসবাব, ল্যাপটপ, ফোন... পুরাতন বলতে আমার দাদীমা বুড়ো গাড়িটা। সেটাও কতোদিন থাকবে জানি না।
নতুন শহরে এখনো তেমন অভস্ত্য হতে পারিনি।  কখনো কখনো ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। নিজের কাছ থেকে কি পালানো যায়?
এখনো তেমন কোন বন্ধু হয়নি।  সারাদিন অফিসের মাঝে কেটে যায়। বিকালে শুণ্য ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করেনা। কাজের পরে তাই উইন্ডো শপিং করে বেড়াই। প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজোনীয় জিনিস কিনে ঘর ভরাই। আবার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স দেখে ভয় পেয়ে ফেরত দিয়ে আসি। এই বিশাল আধা চেনা শহরে একা একা ঘুরে বেড়াই। 
এখানে অবহাওয়া এখন খুবই সুন্দর। বিকালের দিকে সাগর পারের হাওয়া গায়ে লাগে।  সারাদিনই প্রচন্ড বাতাস থাকে। এমন সুন্দর বিকাল গুলোতে খুব ইচ্ছা করে দৌড়াতে; বাঁধন ছাড়া , গন্তব্যহীন  মুক্ত দৌড়। কিন্তু নিরাপত্তার ভয়ে আমি জোড়ে টিভি ছেড়ে ঘরে বসে থাকি আর জাঙ্ক ফুড খাই। আগে একবারে বেশী বেশী রান্না করে রেখে দিতাম ,সারা সপ্তাহ জুড়ে সেটাই খেতাম। এখন দু'দিনের পুরানো খাবার আর খেতে ভালো লাগে না। টেইক আউটের পরিমাণ তাই বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে, সেইসাথে বাড়ছে প্রস্থ। প্রতিদিনই ভাবি আজই শেষ। কাল থেকে নিয়মিত এক্সারসাইজ আর পরিমিত আহার। কিন্তু রঙ চঙ্গে , কুড়মুড়ে চিপ্‌সের প্যাকেটের কাছে বারে বারে হার মেনে যাই।
এখানে বাস সার্ভিস আছে। একদিন সামান্য এ্যডভেঞ্চারের আশায় বাসে চেপে বসলাম। উঠতেই এক  রোদচশমা পড়া মধ্যবয়সী লোক আমাকে কী যেন হাতের ইশারা করলো।  ব্যাপার কী বুঝতে না পেরে কানে আইপড লাগিয়ে, কিছু না দেখার ভাব করে আরেকটু জড়োসড়ো হয়ে বসলাম। খেয়াল করে দেখলাম বাসে কোন মহিলা সহযাত্রী নেই। সবাই মোটামোটি শ্রমিক । মাঝবয়েসী লোকটি তখনো ইশারা করেই যাচ্ছে।  একটু পর সে প্রচন্ড নাক ডাকতে ডাকতে ঘুমিয়ে পড়ল। পড়ে বুঝলাম সে আসলে গানের তালে তালে হাত নাড়ছিলো।
এক স্টপে বাসে উঠল এক দক্ষিণ এশীয় প্রৌঢ়ো জুটি। বোঝাই যায় তারা ছেলে - মেয়ের কাছে বেড়াতে এসেছেন। দেখে কেন যেন আমার বাবা-মার কথা মনে পড়ে গেলো।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাত্‌ দেখি বাস অচেনা রাস্তায় চলছে। সাড়ে সর্বনাশ!!! বুঝলাম ভুল বাসে চড়ে বসেছি। বাসচালককে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হলাম। সে আমাকে পথের হদিশ দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দিলো। বিশাল হাইওয়ের পাশে আমি দুরুদুরু বুকে দাড়িঁয়ে ভাবছি- রাস্তা পার হবো কী করে? কিভাবে বাসায় পৌঁছাবো?  প্রচন্ড অসহায়ত্ব নিয়ে সামনের বাস স্টপে দাঁড়িয়ে থাকলাম পরবর্তী বাসের আশায়।  প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষার পরও বাসের টিকি না দেখে ভাবলাম ভয় পেলে হবে না। দরকার হলে হেঁটেই বাসায় যাবো। সমস্যা একটাই পায়ে প্রায় নতুন লুই বুটেন (Louis Vuitton) জুতা। উপায় না দেখে, জুতার মায়া ত্যাগ করেই হাঁটা শুরু করলাম। প্রায় তিন ব্লক হাটাঁর পর একটা চেনা রাস্তা পেলাম। সেখান থেকে আরেকটা বাসে করে ঘরে  ফিরলাম। এ বাসায় উঠার পর এবারই প্রথম প্রচন্ড ভালো লাগা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলাম।

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

জেনে শুনে বিষ করেছি পান

জেনে শুনে বিষ করেছি পান আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান প্রাণেরও আশা ছেড়ে সপেঁছি প্রাণ যতই দেখি তারে ততই দহি আপনো মনো জ্বালা নিরবে সহি , তবু পারিনে দুরে যেতে, মরিতে আশে লহিবো বুক পেতে অননও বান। জেনে শুনে বিষ করেছি পান আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান । যতই হাসি দিয়ে দহনও করে ততই বাড়ে তৃষা প্রেমেরও তরে - প্রেমও অমৃত ধারা যতই যাচি ততই করে প্রাণে অশনি দ্বান। আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান প্রাণেরও আশা ছেড়ে সপেঁছি প্রাণ আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান । - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমি জেনে শুনে বিষ আজকে আমার আমেরিকা জীবনের চার বছর পূর্ণ হল। আমেরিকা বা বাংলাদেশ কোনটাই আমার কাছে বিষ নয় বরং গলার মাঝে আটকে থাকা বাষ্পের মত। এই বাষ্প কখনো আমেরিকা; আবার কখনো বাংলাদেশ। বড় অদ্ভূত এই টানা পোড়ন - ঠিক এই গানটার মত।