Skip to main content

কলাইডোস্কোপে ২০১০


সেই ইমেইলটা লেখার দিন ঘনিয়ে আসছে। গত প্রায় দু'বছর ধরে অপেক্ষা করেছি কেবল এই ইমেইলটা লেখার। মনে মনে কত খসড়া এঁকেছি। বড় আজব মানুষের মন। আজ লিখতে বসে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। মনের মাঝে ভিড় করছে গত তিন বছর ৯ মাসের অজস্র স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়া সহকর্মীর মুখ। আমার ছোটু ৮' x ১২' কিউব হয়তো কাল থেকে আর কেউ অগোছলো করবে কিংবা করবে না। আমার লাল- কালো ব্যাজটা রিসাইকেলড হয়ে যাবে। এ্যকসেস কার্ড দিয়ে আর কোন দরজা খুলবে না। কোন সহকর্মীর বিদায় দিনে আমরা সবাই মিলে কোথাও খেতে যেতাম। কিন্তু আমাকে বিদায় দেয়ার কেউ নেই। আমিই শেষজন। খুব অদ্ভুত লাগছে। জীবন খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।

ক'দিন আগেই ছাত্রজীবনের ইতি টেনে দিলাম। আর কোন কোথাও পেশা  ছাত্র লিখতে পারবো না। আমার ডেমোগ্রাফিক বদলে গেল।  সময়টাই অদ্ভুত। মাঝে মাঝে নতুন ডেমোগ্রাফিটাকে  দারূণ রোমাঞ্চকর মনে হয় - আবার ভয় ও লাগে। জীবনে ছাত্রত্ব ছাড়া তো আর কিছুই তেমন করিনি। এই লেবেলটা সেই ৪ বছর বয়স থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি -  এটাই আমার পরিচয় হয়ে গিয়েছে। এই ভয় থেকেই একবার ছাত্রজীবনটা টেনে দীর্ঘ করার চিন্তা মাথায় এসেছিলো। কিন্তু জি.আর.ই এর মত বিষ একটা বস্তু গলঃধারণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই আর ও পথে পা দিলাম না।

ড্যলাসের দিন গুলিও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।  কত হাসি, কান্না, নির্ঘুম রাত, ভয় পাওয়া, ভালো লাগা, চেনা মুখ -  এসব ফেলে চলে যেতে হবে - মনে হলেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।  আমার দু'কামড়ার ঘর, ছোট্ট বিছানা, পড়ার টেবিল... প্রথম উপার্জনের টাকা হাতে পেয়ে পৃথিবী কিনে ফেলার আনন্দ। প্রথম গাড়ি কিনে; পথে পথে হারিয়ে যাওয়া।  প্রথম রাধঁতে গিয়ে হাত পুড়ানো। প্রথম এ্যকসিডেন্টের পর অসহায় কান্না। কত অচেনা মানুষের প্রিয় বন্ধু হওয়া, চেনা বন্ধুর দূরে সরে যাওয়া।
এই শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু... পালাতে চাই যত সে আসে আমার পিছু পিছু...

 বছর ও শেষ হয়ে আসছে। অনেক কারণেই ২০১০ আমার  কাছে অর্থবহ হয়ে থাকবে। এ বছরটা যেন আমার বড় হয়ে ওঠা।  পুরোনো ভুল গুলো শুধরে নেবার বছর । নতুন ভাবে নিজেকে জানার বছর, লক্ষ্য পূরণের বছর। 

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।