Skip to main content

খাপছাড়া ৪

পোকার জোকার
ছোটবেলায় বার্ষিক বনভোজন  অথবা পাড়ার  ছোটখাট অনুষ্ঠানে  আপুকে দেখতাম, সবসময়ই পুরস্কার পেত। চকলেট, টোস্টার, ইস্ত্রি আরো কত কি!!!  আমি কখনোই একটা কিছু জিততাম না।   কিন্তু টিকেট হাতে , এই বুঝি আমার নম্বর ডাকলো  এই উত্তেজনাটা দারূণ উপভোগ করতাম।  আর ড্র শেষে আপুকে খুবই হিংসা করতাম।  তাই লটো খেলায় আমার তেমন অগ্রহ  হয় নি।
লটারি তে  আগ্রহ না থাকলেও ক্যাসিনোর ঝলমলে পরিবেশ আমার ভালো লাগে। টেক্সাসে  ক্যাসিনো নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার আকর্ষণ আরো বেড়েছে।  আর এখানে বাস করে টেক্সাস হোল্ডে'ম পোকার পারিনা  শুনে সবাই তাজ্জব। বন্ধুরা বেশ ঘটা করে শেখানো শুরু করলো। কেনা হলো পোকার চিপ্‌স। আমি হাল ছেড়ে দি , কিন্তু ওরা ছাড়ে না। তবে সপ্তাহ খানেকের মেহনতের পরে আমি জেতা শুরু করলাম। অগ্রহও বাড়তে লাগলো।   সপ্তাহে একদিন  পোকার না খেললে  ভালো লাগে না।  এর মাঝে একটা এ্যাপ নামালাম। আমি দিন রাত যখনই সময় পাই পোকার খেলা শুরু করলাম।  ক্লাসে, কাজের ফাঁকে, বন্ধুদের অড্ডায় কেবলই পোকার। সাহস করে একটা পোকার টুর্নামেণ্টেও নাম দিয়ে ফেললাম। কিন্তু বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি , মারামারি করে খেলার মজা, ভাব গম্ভীর পোকার টুর্নামেন্টে নেই। তাই প্রথমে জিতলেও, শেষমেষ বিরক্ত হয়ে হারতে শুরু করলাম।

মশা মশা মশা
ছোটবেলা থেকে  মশার কমড় খেয়ে বড় হয়েছি। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, টিক, ওয়েস্টনাইল মশা কেউ কাবু করতে পাড়েনি। এখন বাইরে গেলেই ফিরছি মশার কামড় খেয়ে।  শুরুতে তেমন পাত্তা দেইনি।  কিন্তু সকালে উঠে  দেখি হাত - পা  টমেটোর মত লাল হয়ে ফুলে গেছে। এক ধরণের ভোঁতা ব্যাথা। ডাক্তার বলে- মশার কামড়; বরফ দাও।  আমি বলি -  "তুমি জানো আমি মশার দেশের মানুষ। এটা মশার কামড় হতেই পারে না।"
আমার অবিশ্বাস দেখে ডাক্তারের হাসি থামে না।  শেষে আমাকে কিছু মশাড় কামড়ের উপর ভিডিও দেখালো। এক আমাজন ভ্রমণকারীর মতে মশা নাকি পিরানহার চেয়েও বেশী ভয়ানক!!!
অবস্থা এতই খারাপ - মানুষ বাইরে যাওয়ার আগে সুগন্ধি মাখে আমি  মশা নিরোধোক স্প্রে করি। আর  তীব্র গন্ধে নিজেরই মাথা ঘুরতে থাকে।

রোযা, ঈদ আর  ধর্মান্ধতা
দিনগুলো বড্ড লম্বা। এত দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই এবার রোযা রাখা হয়নি। তবে  আমার যুক্তি হল-  রোযার প্রচলন হয়েছিলো অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভবের জন্য। আমি নিজে প্রায়ই অনাহারে থাকি। তাই  আমার মত দুস্থ মানুষের কষ্ট বোঝার জন্যই অন্যদের রোযা রাখা উচিত।
রোযা না রাখলেও ইফতারি করতে মাঝে মধ্যে মসজিদে যেতাম।  মসজিদে সাধারণত আমি কামিজ পরে যাই। আর দেশী পোষাক পড়লেই চুড়িটা, টিপটা পড়তে মন চায়।  এটা দেখে এক ভারতীয় মহিলা এসে আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বসলো। টিপ নাকি হিন্দুরা পড়ে। মসজিদে টিপ পড়া হারাম। আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিল। আমি প্রথমে ঠান্ডা মাথায় মহিলাকে বোঝাতে চাইলাম- টিপ আমাদের সংস্কৃতির অংশ, এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক অবান্তর। কিন্তু মহিলা নাচার। শেষে আমি বিরক্ত হয়ে বললাম-  আল্লাহ্‌র ঘরে আমি কীভাবে আসবো সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, তার এ বিষয়ে মাথা না ঘামালেই ভালো হয়।
ইদানীং  এদেশেও ধর্মান্ধতা বাড়ছে। ফ্লোরিডার এক পাদ্রী নাকি কুরান পুড়িয়ে ৯/১১ এর শোক পালন করতে চায়। এ নিয়ে খবরে তোলপাড়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ত্থেকে তার সাথে মধ্যস্ততা করা হয়েছে।  সেদিন আমি পার্কিং লটে, হঠাত দেখি পাশের ট্রাকের চালক হাত দিয়ে আমার দিকে গুলি করবার ভঙ্গি করছে। রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আমার মাথায় ছিলো একটা স্কার্ফ।
 আমার কাছে ধর্ম একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ একমাত্র তখনই প্রযোয্য যখন কাউকে নিজ ধর্ম পালনে বাধা প্রাদান করা হয় অথবা কারো ধর্ম পালন অপরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  এ আমেরিকা আমার কাছে ভীষণ অপরিচিত।  ধীরে ধীরে ধর্মান্ধতা , ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।

বাংলাদেশ বাংলাদেশ
শেষ পর্যন্ত  আমি দেশে যাওয়ার টিকেট কিনে ফেললাম। আগামী বছর জানুয়ারির শেষে দেশে যাচ্ছি। ৬ সপ্তাহের ছুটি। টিকেট টা হাতে  পেয়ে অসম্ভব ভালো লাগছে। চেনা পরিচিত , অর্ধ পরিচিত যাকে পাই তাকেই বলি -" জানো আমি দেশে ফিরছি।" সবাই ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে আমার যন্ত্রণায়। প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে যেতেই মনের মধ্যে ভর করেছে  অজানা  আশংকা ।
জানি - দূর থেকে মিস্‌ করার রোমান্টিকতার মতই তীব্র কাছ থেকে আশাহত হওয়ার বেদনা।

Comments

  1. হাহাহা! statistically বলে দেয়া যায় বেশিরভাগ মানুষেরই পিকনিক লটারি ভাগ্য নাই। আমার সেটাও নাই। কারণ যেটুকু সম্ভাবনা থাকে, সেটার জোরেও কখনো শিকা ছিড়ল না। শতকরা ৫০ ভাও সম্ভাবনা থাকলেও দেখা যায় লটারি তে আমার নাম উঠে না :p

    যাকগে, দেশে আসছ, হালকা মনে ঘুরে যাও। ছোটবেলার স্মৃতির জায়গা, ভালো লাগবেই। আর সময়ের সাথে তো সবকিছুই বদলায়। খুব বেশি আশা রাইখো না। তাহলে আর হতাশ হতে হবে না।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।