Skip to main content

কফির কাপে শহর চেনা

কোন নতুন শহরে গেলেই আমি স্থানীয় কফিশপগুলোতে ঢুঁ মারি। কফিশপগুলোতেই যেন শহরের চরিত্র ফুটে ওঠে। বিভিন্ন শহরের কফির কাপ, দোকানী , খদ্দের সবাইকে কিছুক্ষণ লক্ষ্য করলেই শহরের মানুষজন সম্পর্কে মোটামোটি ধরণা করা যায়। পর্যটন- বানিজ্যিক বা সাবার্বের কফিশপগুলোর চেহারা একেবারেই ভিন্ন।

দক্ষিণের রাজ্যগুলোর জীবন যাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হল গ্যাস স্টেশন। এই গ্যাস স্টেশন গুলোতে পাওয়া যায় না  হেন বস্তু নাই। এদিকের মানুষের নিত্যদিনেরপ্রিয় কফির যোগানদাতাও তাই গ্যাস স্টেশন। সব গুলোই প্রায় সেলফ সার্ভিস। নিজের ইচ্ছা মত ক্রিম, চিনি দিয়ে নিজের কফি বানিয়ে নাও। গ্লাসের আকারো তুলনামূলোক ভাবে বড় ,দামেও সাশ্রয়ী। টেক্সাসের গড়পড়তা টল কফি কাপ ১৬ থেকে ১৪ আউন্সের হয়। টেক্সাস সাইজ !!!

একেবারেই ভিন্ন চরিত্র পর্যটন শহর গুলোতে। প্রায় প্রতিবল্কেই কফিশপ থাকবে। মানুষ ছুটি কাটাতে আসে, কারো তেমন তাড়া থাকে না । চারিদিকে কেমন ঈদ ঈদ আমেজ। বেশীরভাগ জায়গাতেই সার্ভার থাকে। তারা বেশ চড়া টিপসের আশা রাখে। চেইন শপগুলোর চেহারাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। অরল্যান্ডোতে, ডিজনীল্যান্ড থেকে ৫০০ গজ দূরে তিন তলা ম্যাকডোনাল্ডসের কাস্টম মেন্যু  আর ডেকোরেশন দেখে যে কেউ অবাক হয়ে যেতে বাধ্য। একখানে বাচ্চাদের ভিড়ই বেশী। আবার ডেটোনার কফি শপগুলোতে কাক ভোরে,  পার্টি ফেরত তরুণ তরূনীদের আড্ডা।

ম্যানহাটনের প্রতি  কোনাতেই একটা করে স্টারবাক্স আছে। সকালে সবাই কাগজের কাপে কফি নিয়ে কাজে দৌড়ায়। এসময় কফি শপে বসে কফি খেতে দেখিনি খুব তেমন কাউকে। এখানের গড়পড়তা টল কফির দাম দক্ষিণের মত হলেও কাপের আকার মাত্র ১২ আউন্স। ৫ টার পর থেকে ম্যানহাটনের চেহারা পালটে যেতে থাকে। বানিজ্যিক শহর মুহুর্তেই পর্যটকের শহরে পরিণত হয়। বিল্ডিং গুলোতে বাতি জ্বলে ওঠে একে একে। ছোট ছোট দোকানগুলোতেও ভীষণ ভিড়।  একবার কেউ টেবিল পেলে সহজে ছাড়ে না। টেবিল না পেলে, টাইম স্কোয়ারের বিশাল চত্ত্বরে লন চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে। বিশাল টিভিতে সুপারবল দেখে। গভীর রাতেও ম্যানহ্যাটন লোকে লোকারণ্য। শেষ মেট্রোতেও ভিড়ে  দাড়াঁবার জায়গা পাওয়া যায় না।

বড্ড বেশী কেজো মানুষের শহর; রাজধনী ডি.সি। সবাই যেন কাজ করতেই আসে। তবে পর্যটকরাও আসে নানা রকমের জাদুঘর দেখার লোভে। কফিশপ বা খাবার দোকান গুলো জাদু্ঘর পাড়ার বাইরে। দুপুরে সবাই লাইব্রেরী মল চত্তরে জড়ো হয়। কেউ জগিং করে, কেউ গাছের ছায়ায় বসে দুপুরের খাবার খায়, কেউবা ডেট করে। কিন্তু সেটা কেবল ৩০ মিনিটের জন্যই; তারপরই ভোজবাজির মত সবাই উধাও। ডি.সি এর আরেকটা জিনিস বেশ মজা লাগলো অফিস ফেরত সবাই বিজনেস স্যুটের সাথে স্নিকারস্‌ পরে বাস , ট্রাম ধরতে দৌড়ায়।এদিক থেকে নিউইয়র্কারদের কৃতিত্ব বেশী , ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবাই হাল ফ্যাশনের জুতা পড়ে। অফিস ছুটির পরই শহরটা ঝিমিয়ে পড়ে।

চরিত্রের দিক থেকে টরান্টো  হল ম্যানহাটন আর ডি.সি এর মাঝামাঝি। দিনের বেলায় অনেক মানুষ। কফি শপগুলোতেও বেশ ভিড়। সবাই হাতে কফি নিয়ে নিজের কাজে যায়। কফির কাপ আরো ছোট। ১০ আউন্সের মত। দোকান গুলোতে প্রচুর মানুষ।  ৬ টার পর থেকে অবশ্য ভিড় কমতে থাকে।  দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়। দু’ একটা পর্যটন আকর্ষণ  অবশ্য আরেকটু রাত পর্যন্ত খোলা থাকে।

পশ্চিমের বন্দর শহর স্যানফ্র্যান্সিস্কো আবার উওরের  শহরগুলো থেকে একেবারেই আলাদা।  মানুষ গুলো একটু সহয সরল। জীবনযাত্রাও একটু ধীর। বুটিক গুলোতে ছুটির দিনেও  বেশ ভিড়। তবে এখানে চেইন দোকান গুলো ছাড়াও অনেক ছোট ছোট স্থানীয় দোকান চোখে পড়ে।অনেক উপমহাদেশীয় ও এশীয় মানুষ। চোখে পড়ল অনেক ভাস্‌মান মানুষ।  এ শহরের অন্যতম আকর্ষণ জেলেপল্লীতে ( Fisherman’s Whorf) ভাড়ার চাও চোখে পড়ল মশ্‌লা দেয়া চা; স্বাদ যদিও দেশী চায়ের ধারে কাছেও নয়।

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।