Skip to main content

প্রবাসে একুশ

প্রবাসে এবারই প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে গেলাম।মিলনায়তনের প্রবেশপথে ঝুলানো একুশের পোস্টার। বাংলাদেশের নানা বিখ্যাত স্থাপত্যের ছবি; পাশে ছোট্ট করে বর্ণনা। শিল্পমানের দিক থেকে তেমন কিছু না হলেও, বিদেশে নিজের দেশের সামান্য চিহ্নও বড্ড আপন লাগে।

যেতে একটু দেরী হয়েছিলো, যখন হলে ঢুকলাম ততক্ষণে অনুষ্ঠানের প্রায় অর্ধেকটা শেষ। প্রথমেই নজর কাড়ে মঞ্চের উপর বানানো শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। লাল সূর্যটা বানানো হয়েছে কেবল আলো দিয়ে।অদ্ভুত ভালো লাগে আমার । বাচ্চারা গাইছে "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কী ভুলিতে পারি? " প্রবাসী শিশুদের মুখে আড়ষ্ঠ উচ্চারণের বাংলা গান শুনে আমার ভারী গর্ব হয়। বহুদিন পর একসাথে এত্ত বাংলা কথা শুনি; দেখি শাড়ি-পাঞ্জাবি পড়া লোকজন। কয়েকজন আবার নিজেই টি-শার্টে বর্ণমালা লিখে নিয়েছে। সবার মাঝেই একুশের চেতনা। এর পর শুরু হয় বড়দের গান। স্থানীয় গায়ক-গায়িকারা একে একে গেয়ে চলেন নানা দেশাত্ম্রোধক গান। বাংলাদেশ থেকে শত হাজার মাইল দূরে বসে দেশের গান শুনতে শুনতে কী যে এক অনুভুতি আমায় পেয়ে বসে। আমিও গানের সাথে তাল মিলাই।

এরপর মঞ্চে উঠে আসেন এক গায়ক, পরণে তার পাকিস্তানের পতাকার রঙের ক্যাটক্যাটে সবুজ স্যুট। মাইক হাতে বলেন তিনি নিজে সুব করা ভিন্নধর্মী গান গাইবেন। প্রায় উর্দু গজলের সুরের সাথে তিনি গেয়ে চলেন “অমর একুশ জিন্দাবাদ”। জিন্দাবাদ শব্দটা বেশ জোরালো, কানে লাগে। আমি অবাক হয়ে যাই, ভাবি গায়ক হয়তো জাতীয়তাবাদি দলের সমর্থক। এরপর মঞ্চে আসেন আরেক গায়িকা। অসাধারণ তার গলার কারুকাজ, প্রায় নিখুঁত গায়কী। গজলের সুরে বাংলা ভাষায় তিনি গেয়ে চলেন… “স্বাধীনতা তুমি করলে যে দেশকে দু’ভাগ… মধ্যে তার কাঁটাতার…/ স্বাধীনতা তোমার জন্য আমার সোনার দেশ হলো যে আজ বিদেশ বিভুঁই ।” আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারি না। ক্ষোভে আমার হাত মুঠো হয়ে আসে। ইচ্ছে হয় তার মাইক্রোফোন কেড়েনি। আরো অবাক হয়ে যাই যখন দেখি গান শেষে দর্শক হাততালি দিচ্ছে। আমার বড্ড ঘেন্না হয়। ৩০ লক্ষ্য শহীদের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার এই অপমান আমি সহ্য করতে পারি না। রাগে, ঘৃণায় আমার কেবলই কান্না পায়।
অনুষ্ঠান শেষে এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করি এই গায়কের নাম কি? কিভাবে আয়োজকরা একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে এ ধরনের গান গাইতে দিল। সে আমাকে নিরাপত্তার ভয় দেখিয়ে বলে- “ তোমার এগুলো নিয়ে বেশি ঘাটাঁঘাটির দরকার নাই।"
রাত ১২ টায় শুরু হয় প্রভাতফেরী। জুতা খুলে হাতে শহীদ মিনার বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ছোট বড় সকলে। মাইকে বাজতে থাকে “তুমি বাংলা ছাড়…”

আমার মনে প্রশ্ন জাগে বাংলা থেকে পাক হানাদারদের তাড়াতে পারলেও পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়া এই পাক-মন –পেয়ারুদের নিয়ে আমরা কী করবো?

প্রথম প্রকাশ : সচলায়াতন ০২-২২-২০১০

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।