Skip to main content

এলোমেলো দিনলিপি ৪

মৃত্যুদন্ড  - হ্যাঁ নাকি না ?
ক্লাস শেষে ফিরছি, একটা ছেলে খুবই কাঁদো কাঁদো ভাবে আমার হাতে একটা লিফটলেট ধরিয়ে দিয়ে বললো তুমি প্লিজ গভর্নররের অফিসে ফোন করে এই ছেলেটাকে মৃ্ত্যুদন্ডের হাত থেকে বাঁচাও। ওকে অন্যায় ভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সেদিন সন্ধ্যা ৬ টায় ফাঁসি কার্যকর করা হবে। আমি লিফটলেটটা খুলতে পারলাম না। আমার কাছে মনে হচ্ছিল , খুললেই আমি একটা অব্লিগেশনে পরে যাব। আমি আসামী সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারতাম । একটা অজানা আতঙ্ক আমাকে ভর করল; আমি কিছুই করলাম না।

মৃত্যুদন্ড সম্পর্কে আমার তেমন কোন সুস্পষ্ট মতামত নেই। সুইডেন আসলাম বা জ্যাক দ্যা রিপারের মত অপরাধীদের জন্য মৃত্যু দন্ডও যথেষ্ট নয়। মৃত্যু কি আসলেই কোন শাস্তি হতে পারে? কিন্তু যদি সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয় ? সিরিয়াল কিলিং কি মানসিক ব্যাধি?
জেনেশুনে সজ্ঞানে যদি কেউ অপরাধ করে অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া উচিত্‌। আবার অপরাধী যদি দোষ স্বীকার করে সংশোধিত জীবন যাপন করতে চায় তবে তাকেও তো সুযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু আমাদের ট্যাক্সের পয়সাতে দাগী আসামিদের জেলে পুরে রাখাও তো অপচয়।

বই পড়া
হূমায়ুন আহমেদের একটা উপন্যাস সমগ্র পেয়েছি। বইটার সবচেয়ে ভালো দিক হলো কোন সূচীপত্র নেই। কিংবা থাকলেও আমি খুঁজে পাইনি। কিছুটা পড়া শুরু করলে বুঝতে পারি  বইটা আমার আগে থেকেই হয়তো পড়া। এটা বুঝতে পারলেই আর উপন্যাস বা গল্পটা শেষ করা হয় না। তাই আমি একটা বুদ্ধি বার করলাম। আমি চোখ বন্ধ করে বইটা খুলি যে পাতা আসে সেখান থেকে  বইটা পড়তে থাকি। একসময় সেই গল্প শেষ হয়ে যায় । আমি পরের গল্প প্রথম থেকে শুরু করিনা, আবার একটা র‌্যান্ডম পাতা খুলে পড়তে থাকি।


গাড়ি - ঘোড়া
খুব শখ ছিলো একটা নতুন গাড়ি কিনবো এবার। টুকটুকে লাল রঙের। দেখলামও কিছু। কিন্তু চাচ্চুদের ভেটোর কারণে আমার পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। বিশাল একটা ঢাউস সাইজের পুরানো গাড়ি কিনলাম। গাড়ি দূর্ঘটনার পর থেকে আমার বিশাল গাড়ির শখটা চলে গিয়েছে। আমি ঠিক করেছি এরপর একটা লাল মিনি কুপার লিজ্‌ করবো।

আমার এক বন্ধু একটা জোক্‌ বলেছিলো -   
ইউরোপিয়ান গাড়ি গুলো হলো গার্লফ্রেন্ডের মত।  শো অফ্‌ করবি,  জয় রাইডে যাবি, বেশী বেশী ইন্স্যুরেন্স দিবি। কিন্তু দু'-তিন বছর পরই সেগুলো নানা ভ্যান্তাড়া শুরু করবে; তখন ফেরত দিয়ে আসবি।
 আর জাপানিজ্‌ গাড়ি গুলো হল বউয়ের মত। খুব বেশী ঝকঝকে নয় হয়তো কিন্তু দারূন নির্ভরযোগ্য, মেইন্ট্যনেন্স খরচ কম। একটু যত্ন করলেই অনেকদিন থাকবে।

পাসওয়ার্ড চক্র:
তথ্য নিরাপত্তা (Information Security) উপর একটা স্পেশালাইজেশন  ক্লাস শেষে মনে হল আমার পাসওয়ার্ড গুলো বড্ড সহয। আমার সম্পর্কে একটু জানলেই যে কেউই হ্যাক করতে পারবে। তাই একধারে সমস্ত পাসওয়ার্ড বদল করা শুরু করলাম। আমার ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে শুরু করে ইমেইল পর্যন্ত।আমার নিউমেরিক স্মৃতিশক্তি ভালো যে কোন কিছু তিনবার আওড়ালেই মনে থাকে। তো আমি একে একে পাসওয়ার্ড বদল করছি আর মনে মনে আওড়াচ্ছি। সব মিলিয়ে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক পাসওয়ার্ড।  প্রতিটাই ভিন্ন।

খুব দরকারের সময়ই স্মৃতি আমার সাথে প্রতারণা করে। ঠিক যেমন করল গতকাল সকালে। অফিসের উইন্ডোজ পাসওয়ার্ড ভুল টাইপ করলাম। সর্বোচ্চ তিনবার চেষ্টা করা যায়। এরপর একাউন্টে তালা মেরে দেয়া হয়। 
অগত্যা আমি হেল্পডেস্ককে ফোন করলাম। জনাব নিতিন ভাট্টিওয়ালা আমাকে হাই কোর্ট দেখিয়ে ছাড়লেন।  ভারতীয় কল সেন্টারগুলোর উপর আমার তেমন ভরসা নেই। পারতপক্ষে আমি এদের স্মরণাপন্ন হই না। এর প্রধান কারণ হল এরা প্রতি বাক্যের শেষে - Thanks for waiting patiently  বলে; চরম বিরক্ত লাগে। আমি মোটেও ধৈর্য্য ধরতে রাজি নই । এসব কথায় সময় নষ্ট না করে আমার কাজটা তাড়াতাড়ি করে দাও না বাপু !!

উল্কি
পাশ করার আগে আমি অবশ্যই একটা উল্কি করাতে চাই। সেলটিক(Celtic) উল্কি গুলো আমার সেরকম পছন্দ নানা রকম নকশা দেখলাম। কিন্তু কোনটাই তেমন পছন্দ হল না। আমার উল্কিটা কেবল দেখতে ভালো হলেই হবে না, অর্থপূর্ণও হতে হবে। তাই ঠিক করলাম নিজেই ডিজাইন করবো।ভাবা যত সহয করা ততটা না। প্রথম প্রথম প্রায় সবই মেহেদীর নকশার মত হল। তারপরো কয়েকটা মোটামোটি চলনসই হয়েছে। দেখা যাক কোনটা করি ।


আমার নামের বাংলা ক্যালিগ্রাফি


সাদা কালো ক্যালিগ্রাফি


মেহেদীর নকশা


  ঢং টিপের নকশা

নাটাই ছেঁড়া ঘুড়ি
অনেকটা শাড়ির পাড়ের মত

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।