Skip to main content

হাসপাতালে কয়েক ঘন্টা আর সাথে কিছু ভাঙ্গা স্বপ্ন


আমার হাল্কা পাত্‌লা হাসপাতাল ও ডাক্তার ভীতি আছে। খুব দরকার না হলে এই দুই কে আমি এড়িয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করি। ছোটবেলায়  আমার জীবনের লক্ষ্য রচনায় ডাক্তার হওয়ার বাসনা বেশ ফলাও করে প্রচার করলেও;  কাটাকুটির ভয়ে প্রথম সুযোগেই জীববিজ্ঞান বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। এখনো আমার এপ্রন পড়া কোন বন্ধুকে দেখলে মা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।

কিছুদিন আগে একটা চেইন গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লাম। প্রথমে কিছু না বুঝলেও। হঠাত করে দেখি প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। ঘাড় নাড়াতে পাড়ছি না, দৃষ্টিও ঝাপ্‌সা। বুঝতে পারলাম কঙ্কাশান হচ্ছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন দেখলাম ব্যাথা কমছে না, তাই বাধ্য হয়েই গেলাম  স্কুলের হেলথ্‌ সেন্টারে।  আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিলো না, তাই প্রথমে রেজিস্ট্রেশান করালো। তারপর এক নার্স এসে নানা প্রাথমিক সমস্যা জানলো । তারপর ২য় নার্স এসে মেডিকেল হিস্ট্রি নিলো। তারপর এলো ডাক্তার। ডাক্তার বলতেই আমার টাক মাথা গোঁফোয়ালা সফদর ডাক্তারের চেহারা মনে হয় কেবল। কিন্তু এই মহিলা বিউটি প্যাজেন্টে না গিয়ে ডাক্তারি কেন করছে  সেটা  একটা রহস্য।

যাই হোক ডাক্তার কিছুক্ষণ আমাকে টিপে টুপে অনেকভাবে পরীক্ষা করে কোথায় যেন চলে গেল। এদিকে আমি মাথা ব্যাথায় মরে যাচ্ছি। কখন ওষুধ দিবে ?  একটু পর সে হাসি মুখে  ফেরত আসলো, আমি ভাবলাম যাক এবার মুক্তি, আমার একটুও ভালো লাগছিলো না  সেখানে অপেক্ষা করতে।
ডাক্তার বললো - "দুঃখিত তোমাকে আমরা যেতে দিতে পারবো না , তোমার আরো কিছু পরীক্ষা দরকার আমারা তোমাকে জরুরী বিভাগে পাঠতে চাই। "
-কেউ আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে কি না; নয়তো সে এ্যম্বুলেন্স ডাকবে। এবার আমি পুরাই ভড়কে গেলাম। পিয়াকে ফোন করে বললাম আমাকে নিয়ে যেতে। পিয়া এসে আমাকে জরুরী বিভাগে নিয়ে গেল।
সেখানে প্রথমেই আমার হাতে একটা  সিল ব্যান্ড লাগিয়ে আমাকে একটা বিছানায় শুইয়ে পর্দা টেনে দিল। মুহুর্তেই আমি রাদিয়া নূর থেকে হয়ে গেলাম নম্বর ৬। দেখি নার্স বা অন্য কেউ নম্বর ৬ কে কি কি করতে হবে বলে যাচ্ছে। কেউ আমার মতামত নেয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না কারণ আমি আর মানুষ নই , একটি সংখ্যা মাত্র।
একজন এসে আমাকে একটা পেছনহীন হসপাতাল জামা দিয়ে গেলো। আমি একটু টিভি দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন শব্দই ভাল লাগছিলো না। টিভি মিউট করে , মানুষের হাত পা নাড়ানো দেখলাম।  একজন একটা হুইল চেয়ারে করে আমাকে এক্স রে ঘরে নিয়ে গেল । প্রচন্ড ঠান্ডা সে ঘর। আমার ভীষণ ভয় করতে লাগলো। যদিও এক্সরে টেকনিশিয়ান নানা কথা বলে আমাকে অবোধ দিতে চাইলো। এক্সরে শেষে আমাকে পাঠালো ক্যাটস্ক্যানের জন্য। ততক্ষণে আমার ভয় পাওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিশাল এম. আর. আই .  মেশিন দেখে তাই কোন ভাবান্তর হলো না। আরো কিছু পরীক্ষা শেষে আমি আমার ফেরত আসলাম ৬ নম্বর কক্ষে।
অরোও ঘন্টা খানেক বাদে রিপোর্ট নিয়ে এক নার্স এসে বললো ভয়ের কিছু নেই। আমাকে কিছু ব্যাথা নাশক দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।  তিনদিন  পর  মেডিকেল বিলের চিঠি পেলাম। তিন ঘন্টার জন্য আমাকে প্রায় ১৫০০ টাকার বিল পাঠিয়েছে।  যদিও এই টাকা বীমা কোম্পানিই দিবে তবুও ...

আমার গাড়ি নিয়ে গেলাম ঠিক করতে। প্রচন্ড ধাক্কায় গাড়ির পাটাতন নাকি  সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। এটা ঠিক করার অযোগ্য। বীমা কোম্পানি যে টাকা দিতে চাচ্ছে, তাতে আরেকটা গাড়ির ডাউন পেমেন্ট হবে কিনা সন্দেহ !!

এ মাসের ১৮ তারিখ থেকে আমার চাকরি থাকছে না। বহুদিন পরে আবার সম্পূর্ণ বেকার জীবন।

আমি পিঠের ইনজুরির কারণে একটানা বসে থাকতে পারি না। এ অবস্থায় ২৪ ঘন্টা জার্নি করে দেশে যাওয়া সম্ভব না। তাই দেশে যাওয়ার পরিকল্পনাও বাতিল।

এই সোমবার থেকে আমার সেমিষ্টার ফাইনাল। অথচ কিছুতেই মনযোগ দিতে পারছি না।

বিপদ কখনো একা আসে না - কথাটা যে কত বেশী সত্য সেটা  এখন বুঝতে পারছি।

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।