Skip to main content

এলোমেলো দিনলিপি ৩

 কী যে সমস্যা? সারাক্ষণ মাথায় কত শত আইডিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। এ যেন আমাকে কেউ হাত পা বেধেঁ পানিতে ফেলে দিয়েছে। কিছুই ভাল লাগছে না। এবারই প্রথম থ্যাঙ্কসগিভিং ডিনারে চাচ্চু  কিছু  করলো না। চারপাশের পরিবেশ খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। চেনা মানুষ গুলো অচেনা ব্যবহার করছে।এই পরিবর্তনটা তাই মেনে নেয়া কষ্টকর। প্রতিদিনই তোমার কিছু করে যে আমায় অবাক। আমার মনে হয় যে কোন পরিবর্তনই খুব দ্রুত হওয়া উচিত। বিশাল ধাক্কা খেয়ে টিকে থাকতে পারলেই তো হলই, আর না পারলে বুঝে নিতে হবে আমার সাধ্য ছিলও না । কিন্তু এমন স্লো পয়জনিং এর মত পরিবর্তন গুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া আমার জন্য খুব কষ্টকর।

কদিন ধরে  চাকরি নিয়ে বেশ টানা পোড়ন গেল। ২ সপ্তাহ আগে গ্রেগ জানিয়েছিলো, টেলিকমের প্রায় ২০% (১৫০০০) কর্মচারী ছাটাঁই হবে । আমি যদিও কাজ করি আই.টি এর সাথে, কিন্তু কাগজপত্রে আমি এখনো টেলিকম কর্মচারী। ব্যাপারটা একটু জটিল। চাকরি না থকালে এদেশে থাকা বেশ কষ্টকর। আর যদি আমার মত খরুচে হাত খোলা মানুষ হয় তাইলে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির পোয়া বারো।  আমি একে একে আমার সব বন্ধু, সহকর্মীদের চলে যেতে দেখেছি। সে অনুযায়ী আমি যাবতীয় মানষিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। প্রথম ক'দিন ব্যাপক কান্নাকাটি করলাম।তাড়াহুড়ো করে দু'টা ইন্টারভিয়্যু দিলাম। কিন্তু মনে হয় এ যাত্রায় বেচেঁ গিয়েছি।

তবে চাকরি চলে যাবে ভেবে আমি বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম। এ ব্যাপারটা আমি বেশ উপভোগ করেছি। আসলে হারাবার ভয় থাকলেই কেবল মানুষ আকঁড়ে ধরতে চায়  কথাটা মনে হয় ঠিক না। আমার বেশ রিলিভ্‌ড লাগছিল। প্রায় ৩ বছর ধরে একই কাজ করছি। আর ভালো লাগছে না। কিন্তু সপ্তাহান্তে বেতনটার জন্য আটকে পড়েছি।

আমার ড্যালাস আর ভালো লাগছে না ।চেনা দুঃখ চেনা সুখ, চেনা চেনা হাসি মুখ ।কোন চ্যালেঞ্জ নেই। জীবন বড্ড পানশে লাগছে।কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে পালানো যায় না। তাই ঠিক করেছি দেশেই যাব।  আর শীতের পিঠা খেতেও ভীষণ ইচ্ছে করছে। বহুদিন ভাত খাই না (সুশি বাদ দিলে)। প্রায় তিন মাস পরে সেদি্ন রান্না করলাম। মোটেও ইচ্ছা করছিলো না রাধঁতে। অনেকটা জোর করেই করলাম।  মনে হয় লবণ দিতে ভুলে গেছি অথবা অন্য কিছু। নিজের রান্না নিজেরই মুখে রুচলো না। আজকাল আমার সারাক্ষণই ক্ষুধা লাগে কিন্তু কিছুই মুখে দিতে ইচ্ছে করে না। এ এক অদ্ভুত যন্ত্রণা !


 বহু পুরানো একটা গান মাথায় ঘুরছে। আমার যত গান টা শুনছি; আমার কেবলই মনে হচ্ছে সময় বড্ড কম।


অবাক
কত কি যে দেখি নি, কত কি যে শুনি নি।
যা করব ভাবি নি, তাই কেন যে করি।
কি আশা মনে রেখে, দেখি যায় সে ভেঙ্গে।
সময় কে যে বুঝি নি, বোঝা কত বাকি।
ও আমার সত্যি জানা বাকি, আমার অবাক হওয়া বাকি।
এ বোঝা বড় ভারি!

করে জীবন আমায় অবাক, তোমাকেও করে জানি।
প্রতিদিনই কিছু তোমার, আমার আছে যে জানার।
এমন হয়ত ভাবি নি, যা চোখে দেখি নি।
সময় কে যে বুঝি নি, বোঝা কত বাকি।
ও আমার সত্যি জানা বাকি, আমার অবাক হওয়া বাকি।
এ বোঝা বড় ভারি!

আমার বোঝা কত বাকি।
আমার সত্যি জানা বাকি।
আমার অবাক হওয়া বাকি।
এ বোঝা বড় ভারি!

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।