Skip to main content

নানা রঙের ঈদ



সাদা- কালো ঈদ


ছোটবেলার ঈদগুলো ছিলো সাদা কালো। ইফতারি শেষে দৌড়ে ছাদে উঠে , ঈদের চাঁদ দেখা, বিটিভিতে "রমজানের ঐ রোজার শেষে" শুনতে শুনতে প্ললবী (দাদীর বাসায়) যাওয়ার জন্য তৈরী হতাম। ঈদের দিন সকালে মায়ের তাড়া খেয়ে নতুন জামা পড়তাম। মা নিজের হাতে তিন বোনের একই রকম জামা বানিয়ে দিত। মামের (দাদী) বিখ্যাত পায়েস দিয়ে ঈদের সকালে নাস্তা করতাম। তারপর বাবা চলে যেত নামাযে। সে সময় ঢাকায় মেয়েদের ঈদের নামায পড়ার রেওয়াজ ছিল না ।এ সময়টা মা তাই খুব মন খারাপ করে থাকত- তার কোন ছেলে নেই দেখে বাবাকে একা ঈদের নামায পড়তে যাচ্ছে। বাবা ফিরে এলে সালাম করে সালামি নিতাম বড়দের কাছ থেকে। দুইটা কারণে ঈদ আমার খুব প্রিয় ছিল সে সময় - প্রথমতো একমাত্র ঈদ সালামিই ছিল আমাদের বাত্‌সরিক রোজগার আর ওই দিন আমার সাজার অনুমতি ছিল। সালামি শিকারের পর হত ফটো সেশন। তিন বোনকে একই রকম জামা পড়িয়ে ছাদে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হত। আমার ছোটবেলার প্রায় সব ঈদের ছবিই একই পোজে, একই জায়গায় তোলা।

বিকাল তিনটা থেকে শুরু হত বিটিভির ঈদ অনুষ্ঠান। প্রথমেই থাকত পূর্নদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। মামের টিভিটা ছিলো সাদা-কালো। তাই ছোটবেলার সেই ঈদগুলো আমার কাছে আজও সাদা-কালো রয়ে গেছে।



রঙ্গিন ঈদ

আরেকটু বড় হয়ে ঈদ করতাম আমাদের বাসায়। মাম চলে আসতো। এই ঈদ গুলো ছিল দারুণ রঙ্গিন । সকালে উঠে নতুন জামা পড়ে সাজুগুজু করতে করতে বাবার নামায থেকে ফেরার সময় হয়ে যেত। সালামি হাতে পেয়েই শুরু হত ম্যারাথন টো টো। প্রথমে সব প্রতিবেশী আন্টিদের বাসায় গিয়ে এটা সেটা খাওয়া। তারপর হয়তো স্কুলের কোন বন্ধুর বাসায় আড্ডা। উদয়নের সামনের খালি রাস্তায় হাঁটা। হঠাত বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে কোন নিরীহ পথচারী বা প্রেমিক জুটিকে হেনস্তা করা, কিংবা ঈদে দেশে যেতা না পারা কোন পরিচিত মামুর সাথে দীর্ঘ আলাপে মেতে ওঠা। বিকালে হয়তো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে অড্ডা। রাতে খেয়ে পরিবারে সবাই মিলে একসাথে ঈদের অনুষ্ঠান দেখা।

ওহ! প্রতি আড্ডাতে আবার ভিন্ন জামা পড়া হত। সেই সাথে পালটে যেত চুড়ি, টিপ , জুতা সবকিছু। বান্ধবীদের মধ্যে সূক্ষ প্রতিযোগিতা থাকত কে ঈদে কয়টা জামা নিল তা নিয়ে। ঈদ চলতো কয়েক দিন ধরে। টিভিতে যতদিন ঈদের অনুষ্ঠান হত - ঈদের অনন্দও চলতো ততোদিন।


এক বর্ণের (Monochromatic) ঈদ


প্রবাসের ঈদগুলো আমার কাছে লাগে এক বর্ণের। তবে সালামির বিচারে প্রবাস ঈদের জুড়ি নেই।

একেক ঈদ আমি একেকভাবে পালন করার চেষ্টা করি। যেমন গত ঈদটা ছিলো নির্মোহ। কখনো কখনো আমার জগতের উপর প্রচন্ড অভিমান হয় - যা ছিলো আমার নির্মোহ ঈদের নিমিত্ত । আমার শহরে ঈদ হয়েছিলো যেদিন ছুটি নিয়েছিলাম তার আগের দিন। কোন প্রস্তুতি না থাকায়- কিছুই করতে ইচ্ছা করছিলো না। ঈদের দিন অফিস করেছি তবে ক্লাসে যাইনি।

সে তুলনায় এবারের ঈদ বেশ জমকালো হয়েছে। সকালে নামায পড়ে, নাস্তা করেছি ঈদগাহে। বাসায় এসে ঈদের ২য় জামা পড়ে ফটোসেশন করলাম বন্ধুরা মিলে। তারপর গেলাম ফুপ্পির বাসায়। সাবাই মিলে অনেক আড্ডা খাওয়া দাওয়া হল। গত চার বছরের মাঝে এবারই প্রথম মনে রাখার মত একটা ঈদ করলাম।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।