Skip to main content

ভালোবাসা... তোমাদের জন্য



ধূর! এই কামলাগিরি আর ভালো লাগে না।
দিন শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তমাল নিজের মনেই কথাটা ভাবছিলো আর গালি দিচ্ছিলো নিজের ভাগ্যকে। কেন যে সুখে থাকতে ভুতে কিলায় মানুষকে!! কি কুক্ষনেই না ডিবি টা করেছিলো!!!

আবু ভাইয়ের পরামর্শটা ভেবে দেখছে। ভালই মনে হচ্ছে। চার বছরের চুক্তি। থাকা খাওয়া, পড়াশোনা সব খরচ ওদের। উপরি হিসাবে আছে বেতন, বেনিফিটস্‌ । বাবা –মাকেও একটু সাহায্য করতে পারবে। বাসায় এখনও বলেনি। বাবা মনে হয় কিছুতেই রাজী হবে না।
অবশ্য মাকে ম্যনেজ করতে পারলেই হল। বাকীটা ঠিক সামাল দিয়ে নেবে।
প্রিয়াঙ্কাকেও বলা দরকার। কথাটা শুনে ও নিশ্চয়ই ভীষন রাগ করবে…
হিঃহিঃহিঃ প্রিয়াঙ্কার রাগ রাগ মুখটা কল্পনা করে, তমাল নিজের মনেই ই হেসে উঠে।

সে যে বসে আছে একা একা… সেল ফোনটা বেজে ওঠে। রিং শুনেই বুঝে ফোনটা কার।

-কি কর?
- তোমার কথা ভাবি।
- ইসস্‌ চাপা মেরো না । পুরা দিন কোন খবর নাই।
-আমি তো জানিই তুই ঘুম থেকে উঠেই আমাকে কল করবি।
- তোর মন্ডু!! DGM

-তোর সামনে আয়না আছে??
- হা আছে। কেন??
- দেখ তো তোর গালটা কতোখানি ফুলেছে???
- উফ্‌ !! তুমি কি কখনো একটু সিরিয়াস হতে পারো না??
- পারি তো। দেখতে চাও? একখানা সিরিয়াস সিদ্ধান্ত নিসি… সেইটা নিয়া আমার বিজ্ঞ প্রিঙ্কুর সাথে কিঞ্ছিত শলা পরামর্শ করতে চাই।
- কি সিদ্ধান্ত???
- ঠান্ডা মাথায় শুনবা। অর্ধেক শুনেই কান্নাকাটি করবা না।
- তুমি বড়লোক কোন সাদা মেয়ের প্রেমে পড়স?? তাকে বিয়ে করতে চাও????
- তুমি জানলা কেমনে??
- সত্যি??? তাইলে আমার সাথে এতদিন প্রেম করলা কেন???
তমাল অপর প্রান্তে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। এই মেয়েটা এত বোকা কেন? আর কেনই বা তার মত একটা গুড ফর নাথিংকে এত্ত ভালোবাসে??? কোন সন্দেহ নাই পৃথিবীর সব থেকে আজব জিনিষ হল এই মাইয়া মানুষ!!

- বউ???
নিজের অজান্তেই তমালের গলা গভীর হয়ে আসে। সেই একশব্দেই প্রিয়াঙ্কার সব ভয় উধাও হয়ে যায়। তমাল আমেরিকা চলে যাওয়ার পর থেকে যে তার কি হল? সবসময়ই মনে একটা চোরা শঙ্কা কাজ করে। যদিও জানে তমাল, ওর জন্য সব করতে পারে।
- কি?
কান্না আর লজ্জা মাখা কন্ঠ শুনে, প্রিয়াঙ্কার নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে। জানে, পরে অবশ্যই এই রেফারেন্স টেনে তমাল ওকে খেপাবে।
- কান্নাকাটী বন্ধ কর। আমার কথা শুন।
- বল্
- আবু ভাইয়ের পরামর্শটা মনে ধরসে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি , U.S. Airforce এ জয়েন করবো।

২ Lackland Air Force base, San Antonio, TX

সমুদ্র থেকে অল্প দূরে, এয়ার বেস্‌টাকে দেখে তমালের মনটা অকারনেই বিষন্ন হয়ে উঠল।
সন্ধ্যা ৭ টায় রিপোর্ট করার পরই ওদের হাতে একটা নিত্যদিনের কর্ম তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সারি সারি ৫০ টা বিছানা, সাথে একটা করে লকার। ওদের স্কোয়াড্রেনে ৫০ জন। অধিকাংশই সাধারন নিম্নবিত্ত আমেরিকান। ওর মত হাইফেনেটেড কাউকে চোখে পড়ল না।
- হেই ম্যান । বিশালদেহী এক আফ্রিকান- আমেরিকান তমালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।

ঠিক সাড়ে ৩ টায় ককর্শ ভাবে বিউগল বেজে উঠল। ১০ মিনিটে তৈরী হয়ে নিচে যেতে হবে। এক সেকেন্ড দেরী হলেই শুরু করতে হবে বুক ডন। হায় জীবন !!! সকালের অমানুষিক ড্রিলের পর ৩ মিনিটের ব্রেকফাস্ট। ১৫ মিনিটের শাওয়ার ব্রেক। কিন্তু একি স্টল নাই তো!!! পোলাপান দেখি টপাটপ পানির নীচে দাড়াঁচ্ছে আর বেরিয়ে আসছে, কারো দিকে তাকানোর সময় নাই। যাহ আছে কপালে ভেবে তমাল কাপড় ছাড়তে লাগল। বন্ধুদের কাছে মিলিটারীদের সম্পর্কে শোনা গল্পগুলো মনে পড়ে গেল।

৭ দিন শেষ, আরো ১০৫ দিন বাকী। রবিবারে বাসায় ফোন করা যাবে। ট্রেইনিং ইন্সট্রাকটর হাতে একটা ৪ মিনিটের কার্ড আর ঠিকানা লেখা কাগজ ধরিয়ে দিল। আচ্ছা এই কার্ড টা দিয়ে কি ঢাকায় প্রিঙ্কুর সাথে কথা বলা যাবে??
সাত- পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাসায়ই ফোনটা করল তমাল। জ়লদি তুনাকে ঠিকানাটা লিখতে বলল। তার ছোটবোনটা এত্ত গাধা কেন?? একটা সামান্য ঠিকানা লিখতে ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড লাগে??
মার গলাই তো শোনা হল না??
- তুনা মাকে দে তো। প্রন্ত্
- মা আমি ভাল আছি। আমার জন্য দোয়া কর। চিঠি লিখ… মা, মাগো…

খুট্‌ করে লাইনটা কেটে গেল। মার গলা তো শোনাই হল না। রিসিভার হাতে তমাল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল ফোন বুথে। গত এক সপ্তাহের জমা করা কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে বাড়ি দিতে থাকলো তার প্রতিটি কোষে। ডর্মের প্রতিটা ছেলে আজ চুপ; প্রতিটা বিছানা থেকেই আসছে চাপা ফোঁপানোর শব্দ।

মার প্রথম চিঠিটা তমালের হাতে আসল ঠিক তিন দিন পর। সাদা একটা খাম। অথচ মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বস্তু। কখন ৯ টা বাজবে?? চিঠিটা পড়তে পারবে?? ক্লাসে বসে একটু পর পরই হাত দিয়ে বুক পকেটে চিঠিটার অস্তিত্ব অনুভব করছিলো।
চিঠির আনন্দেই যেন রাতের খাবারের সময় তমালের ঠোঁটের কোনায় পানি গড়িয়ে গেল দু'ফোটা। কহুকে যেন ট্রেইনিং ইন্সট্রাক্ট্রর উড়ে চলে এল। এক ধাক্কায় উলটে ফেলে দিল খাবারের ট্রে। সেই সাথে কানের কাছে ছুটে চলল অশ্রাব্য খিস্তি খেউর। তমালের মনে হল ওর কানে যেন কেউ গরম সীসা ঢালছে। পা দুটো সিমেন্টে গাথাঁ। খাবার ঘর থেকে বের হয়ে মনে হল, আবার খাওয়ার জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে???

(হয়তো চলবে... এখনো জানিনা)

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন ২০০৯-০৮-০২

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।