Skip to main content

রিক্সাপুরাণ

ঘোরাঘুরির জন্য আমার প্রথম পছন্দ রিক্সা। রিক্সার মধ্যে একটা আন্তরিক ব্যাপার আছে- যেটা সি.এন.জি এর কাপুঁনি, গাড়ির এফ.এম রেডিও কিংবা ভীরের বাসে খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। রিক্সার সাথে ঢাকাবাসীর সম্পর্ক ও বেশ মজার। যানযটের জন্য প্রাথমিক ভাবে রিক্সাকে দায়ী করা হলেও, আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বলে, ভীষণ যানযটে রিক্সাই সবচেয়ে দ্রুত গন্তব্যতে পৌঁছায়।


তো রিক্সার সাথে আমার ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। একবার রিক্সায় যাচ্ছি সম্ভবত কাটাঁবন- নীলক্ষেত ক্রসিং, হঠাত আমার হাত ব্যাগটাতে টান অনুভব করলাম। ফিরে তাকাতেই দেখি দু’টা কিশোর আমার ব্যাগ হাতে উর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। ঘটনা কি হয়েছে বুঝতে না বুঝতেই দেখি রিক্সাওয়ালা মামা রিক্সা ফেলে, ছিন্তাইকারীদের পিছু নিয়েছে। ব্যস্ত রাস্তায় চালকহীন রিক্সায় বসে আছি হতভম্ব আমরা। পাশ দিয়ে হুশস্ করে বাস, রিক্সা, প্রাইভেট কার গুলো একে একে চলে যাচ্ছে। কি করব বুঝতে পারছি না। রিক্সা থেকে নেমে যাব? নাকি বসে থাকব? ততক্ষণে চালক আর ছিন্তাইকারী দু’জনেই দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গিয়েছে। এমন অবস্থায় যা হয়… আমার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল পাশের বন্ধুর উপর। মিনিট পনেরো পরে রিক্সামামা ফেরত আসলেন, মুখে বিজয়ীর হাসি; হাতে আমার ব্যাগ।
আমি তাকে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবো বুঝতে না পেরে উলটা বকা দেয়া শুরু করলাম…

- মামা এইটা একটা কাজ করলেন?? যদি আপনাকে ছুরি মেরে দিত???
বীরত্ব দেখানোর সুযোগ মামাও ছাড়লেন না…
- কি যে কন আপা !! ওইগুলান হইল বাচ্চা পুলাপাইন … হেরোইন খাওনের লাইগ্যা এইসব করে।
- তবুও মামা …

গন্তব্যে পৌঁছে, আমি রিক্সামামাকে কিছু বেশী ভাড়া দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি খুবই বিরক্ত ভরে বাড়তি টাকা গুলো ফিরিয়ে দলেন।ভীষন অবাক আমাকে আর কথা বাড়াবার সুযোগ না দিয়ে, রিক্সা নিয়ে দ্রুত অন্য দিকে চলে গেলেন।

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন ২০০৯-০১-১৭
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ daylife

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।