Skip to main content

প্রিয় কবির দু'টি প্রিয় কবিতা

যা চেয়েছি, যা পাবো না

- কী চাও আমার কাছে ?
- কিছু তো চাইনি আমি !
- চাওনি তা ঠিক ।
তবু কেন এমন ঝড়ের মতো ডাক দাও ?
- জানি না । ওদিকে দ্যাখো …
রোদ্দুরে রুপোর মতো জল
তোমার চোখের মতো দূরবর্তী নৌকো
চর্তুদিকে তোমাকেই দেখা।
- সত্যি করে বলো, কবি, কী চাও আমার কাছে ?
- মনে হয় তুমি দেবী
- আমি দেবী নই ।
- তুমি তো জানো না তুমি কে !
- কে আমি !
- তুমি সরস্বতী
শব্দটির মূল অর্থে যদিও মানবী
তাই কাছাকাছি পাওয়া
মাঝে মাঝে নারী নামে ডাকি
- হাসি পায় শুনে
যখন যা মনে আসে তাই বলো, ঠিক নয় ?
- অনেকটা ঠিক । যখন যা মনে আসে…
কেন মনে আসে ?
- কী চাও, বলো তো সত্যি ? কথা ঘুরিয়ো না
- আশীর্বাদ !
- আশীর্বাদ ! আমার, না সত্যি যিনি দেবী
- তুমিই তো সেই !
টেবিলের ঐ পাশে ফিকে লাল শাড়ি
আঙ্গুলে ছোঁয়ানো থুতনি,
উঠে এসো
আশীর্বাদ দাও, মাথার ওপরে রাখো হাত
আশীর্বাদে আশীর্বাদে আমাকে পাগল করে তোলো
খামচে ধরো চুল, আমার কপাল নখ দিয়ে চিরে দাও
- যথেষ্ট পাগল আছো ! আরও হতে চাও বুঝি ?
- তোমাকে দেখলেই শুধু এরকম,
নয়তো কেমন শান্তশিষ্ট
- না দেখাই ভালো তবে ! তাই নয় ?
- ভালো মন্দ জেনে শুনে যদি এ-জীবন কাটাতুম
তবে সে-জীবন ছিল শালিকের, দোয়েলের
বনবিড়ালের কিংবা মহাত্মা গান্ধীর
ইরি ধানে, ধানের পোকার যে-জীবন
- যে জীবন মানুষের ?
- আমি কি মানুষ নাকি ? ছিলাম মানুষ বটে
তোমাকে দেখার আগে
- তুমি সোজাসুজি তাকাও চোখের দিকে
অনেকক্ষণ চেয়ে থাকো
পলক পড়ে না
কী দেখো অমন করে ?
- তোমার ভিতরে তুমি,
শাড়ি-সজ্জা খুলে ফেললে তুমি
তার আড়ালে যে তুমি
- সে কি সত্যি আমি ? না তোমার নিজের কল্পনা ?
- শোন্ খুকী
- এই মাত্র দেবী বললে…
- একই কথা ! কল্পনা আধার যিনি, তিনি দেবী-
তুই সেই নীরা
তোর কাছে আশীর্বাদ চাই
- সে আর এমন কি শক্ত ? এক্ষুনি তা দিতে পারি
- তোমার অনেক আছে, কণা মাত্র দাও
- কী আছে আমার ? জানি না তো
- তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই
- সিঁড়ির ওপরে সেই দেখা
তখন তো বলোনি কিছু ?
আমার নিঃসঙ্গ দিন, আমার অবেলা
আমারই নিজস্ব, শৈশবের হাওয়া শুধু জানে
- দেবে কি দুঃখের অংশভাগ ?
আমি ধনী হবো
- আমার তো দুঃখ নেই !
দুঃখের চেয়েও কোনো সুমহান আবিষ্টতা
আমাকে রয়েছে ঘিরে
তার কোনো ভাগ হয় না
আমার কী আছে আর, কী দেবো তোমাকে ?
- তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই !
তুমি দেবী, ইচ্ছে হয় হাঁটু গেড়ে বসি
মাথায় তোমার করতল, আশীর্বাদ…
তবু সেখানেও শেষ নেই
কবি নয়, মুহূর্তে পুরুষ হয়ে উঠি
অস্থির দু’হাত
দশ আঙুলে আঁকড়ে ধরতে চায়
সিংহিনীর মতো ঐ যে তোমার কোমর
অবোধ শিশুর মতো মুখ ঘষে তোমার শরীরে
যেন কোনো গুপ্ত সংবাদের জন্য ছটফটানি
- পুরুষ দূরত্বে যাও, কবি কাছে এসো
তোমায় কী দিতে পারি ?
- কিছু নয় !
- অভিমান ?
- নাম দাও অভিমান !
- এটা কিন্তু বেশ ! যদি
অসুখের নাম দিই নির্বাসন
না-দেখার নাম দিই অনস্তিত্ব
দূরত্বের নাম দিই অভিমান ?
- কতটুকু দূরত্ব ? কী, মনে পড়ে ?
- কী করে ভাবলে যে ভুলবো ?
- তুমি এই যে বসে আছো, আঙুলে ছোঁয়ানো থুতনি
কপালে পড়েছে চূর্ণ চুল
পাড়ের নক্সায় ঢাকা পা
ওষ্ঠাগ্রে আসন্ন হাসি
এই দৃশ্যে অমরত্ব
তুমি তো জানো না, নীরা,
আমার মৃত্যুর পরও এই ছবি থেকে যাবে ।
- সময় কি থেমে থাকবে ? কী চাও আমার কাছে ?
- মৃত্যু ?
-ছিঃ , বলতে নেই
- তবে স্নেহ ? আমি বড় স্নেহের কাঙাল
- পাওনি কি ?
- বুঝতে পারি না ঠিক । বয়স্ক পুরুষ যদি স্নেহ চায়
শরীরও সে চায়
তার গালে গাল চেপে দিতে পারো মধুর উত্তাপ ?
- ফের পাগলামি ?
- দেখা দাও ।
- আমিও তোমায় দেখতে চাই ।
- না !
- কেন ?
- বোলো না । কক্ষনো বোলো না আর ঐ কথা
আমি ভয় পাবো ।
এ শুধুই এক দিকের
আমি কে ? সামান্য, অতি নগণ্য, কেউ না
তবু এত স্পর্ধা করে তোমার রূপের কাছে…
- তুমি কবি ?
- তা কি মনে থাকে ? বারবার ভুলে যাই
অবুঝ পুরুষ হয়ে কৃপাপ্রার্থী
- কী চাও আমার কাছে ?
- কিছু নয় । আমার দু’চোখে যদি ধুলো পড়ে
আঁচলের ভাপ দিয়ে মুছে দেবে ?

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়



পাওয়া
অন্ধকারে তোমার হাত ছুঁয়ে
যা পেয়েছি সেটুকুই তো পাওয়া।

যেন হঠাত্‌ নদীর প্রান্তে এসে
এক আঁজলা জল
মাথায় ছুঁইয়ে যাওয়া।

- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

Comments

  1. এইসব কিন্তু আমার একদম পছন্দ না!! গর্‌র্‌র্‌র!

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।