Skip to main content

StarBucks vs. আলম ভাইয়ের চা


কোথায় যেন পড়েছিলাম , নতুন বিদেশে এসে বাঙ্গালীদের প্রধানত দুভাগে ভাগ হয়ে যান। এক দলের বিদেশে যা দেখে সব কিছুতেই মুগ্ধ হয়, অন্য দলের অবস্থা সম্পূর্ন বিপরীত। তাদের কিছুই ভাল লাগে না। আমি মনে হয় ২য় দলে।
তো বিদেশে প্রথম যে জিনিষটা ভাল লাগল তা হল স্টারবাকস্‌ কফি। কদিনের মধ্যে আবিষ্কার করে ফেললাম দেশের আলম ভাইইয়ের টঙ্গের দোকানের সাথে এর নানা মিল।
- দুটাই তরুনদের প্রিয় আড্ডাস্থল। স্টারবাক্সে অবশ্য বয়স্কদেরও দেখা যায়। এক কাপ কফি নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে নানা তর্ক বিতর্ক, তমুল আড্ডা। কেউ হয়তো গিটার নিয়ে বেসুরো গলায় গান ধরে। পুরো আমেরিকার দ্রুত ছুটে চলা জীবনের সম্পুর্ন বিপরীত চিত্র এখানে। কারো যেন কোন তাড়া নেই। কেবল নিটল আনন্দময় সময়।
- আলম ভাই যেমন সারাদিন রেডিও বাজায়, স্টারবাক্সেও বেজে চলে নানা জ্যাজ মিঊজিক। স্টারবাক্সের কল্যানে কদিনেই ভক্ত হয়ে যাই মাইল ডেভিসের।
- আলম ভাইয়ের সেই প্রবল হলুদ কেক, কলা আর টোস্ট বিস্কুটকের মত স্টারবাক্সেও আছে নানা স্বাদের ব্রাউনি আর মাফিন। আর উপরি হিসাবে আছে ফ্রী ও্যায়ারলেস ইন্টারনেট। ল্যাপ্টপ আর বটমলেস কফি নিয়ে বসে চলে তুমুল ব্রঊজিং।
- অবাক কান্ড মনে হলেও আলম ভাইয়ের লাশের চা আর একটা টল মোকার দাম প্রায় সমান। পার্থক্যটা কেবল টাকায় আর ডলারে।
কিন্তু যতই মনকে বুঝাই , ফাঁকি টা নিজের কাছেই ধরা পড়ে যায।
৩ বছর পর গেলে কি কফি বয়টা আমাকে আলম ভাইয়ের মত বলবে -
- আপা কদ্দিন পর আইলেন!
- আলম ভাই ভুলে গ্যাছেন??? আমি তো এখন আমেরিকায় থাকি।
- হেহ হেহঃ , কি যে কন! আপা, ভুলি নাই । আমি ডিবি করসি এবার, যদি লাগে , তয় আমি কিন্তু আম্পনার অখানেই যাব কলাম।
- কোন অসুবিধা নাই আলম ভাই, আপনি অবশ্যই আসবেন।
- অই পিচ্চি আপারে, চিনি কম, পাত্তি বেশী একটা চা দে! কাপ ধুইয়া দিবি ভাল করে।
টুকটাক কথার পর ব্যস্ত হয়ে পরি , বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, কোন ফাঁকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। খেয়াল হয় মশার জ্বালায়।
চায়ের দাম দিতে উঠি! জ্বিভ কেটে আলম ভাই বলেন
- আপা আপনি আমার পুরানা কাস্টমার , আপ্নের আজ দাম দিতে হবে না।
আমি জোর করি না। এই মমতার মুল্য দু টাকার চায়ের চেয়ে অনেক বেশী। হ্যা আলম ভাইয়ের কাছেও।
পরদিন আবার যাই, দেশবাসীর জন্য আমার আনা কিছু গণ উপহারের একটা নিয়ে যাই। কিন্তু দেয়া হয় না । নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। তার বদলে আমার ঠিকানা আর নাম্বার দিয়ে আসি। ডিভি লেগে গেলে যেন যোগাযোগ করতে পারেন।

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন :২০০৮-০৯-২১

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।