Skip to main content

রাধঁতে রাধঁতে রাধুঁনি

বান্ধবীর বাড়িতে একটা রান্নার অনুষ্ঠান দেখলাম, দেশে বিদেশে রান্না। রাধুঁনি মারাত্মক সেজে গুজে আইফেল টাওয়ারের সামনে চুলা নিয়ে বসে রান্না করছেন নবরত্ন সব্জী। এই সব্জির সাথে আইফেল টাওয়ারের কি সম্পর্ক সেটা চেষ্টা করেও, বার করতে পারলাম না।

পদ্ধতিটা সহজ মনে হল, দেখতেও মন্দ নয়। তাই ঠিক করলাম দুজনে মিলে রান্না করব। আমাদের লাগবে দেশী – মিষ্টি কুমড়া, সীম, আলু, পটল, ঢেঁড়শ ইত্যাদি । প্যারিসে এগুলো সহজে পাওয়া যায় কিনা জানিনা, এই দেশে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। দুই জনে মিলে তিনবার ভারতীয় আর ভিয়েতনামিজ বাজার ঘুরে যখন সব উপকরণ যোগাড় করলাম, তখন আমাদের নবরত্ন সবজি খাওয়ার ইচ্ছা চলে গেছে ।


ঢেঁড়শ ভাজি

ছোটবেলায় আমাদের ঢেঁড়শ ইংরেজী শেখানো হয়েছিলো লেডিস্‌ ফিংগার (ladies’ finger )। আমেরিকাতে এসে চিনলাম ওকড়া (Okra)। এরা ওকড়া কে ফ্রাইড চিকেনের মত করে ভাজি করে খায়, যা কিনা আমার বঙ্গদেশীয় রসনায় নেহাতই পানসা ঠেকে।
তাই ভাবলাম দেশীয় কায়দায় ঢেঁড়শ ভাজি করবো। সিদ্দীকা কবীর’স রেসিপি খুলে বসলাম। কিন্তু হায়! থাই, চায়নীজ্‌ নানা পদের বর্ণনা থাকলেও ঢেঁড়শ ভাজি কোথাও পেলাম না। অগত্যা আম্মুকে ফোন দিইয়ে রেসিপি বুঝে নিলাম।

পাঁচ ফোড়ন লাগবে। এর ইংরেজী নাম তো জানি না ? ভারতীয় দোকানে জিজ্ঞেস করেও সুবিধা হল না (কেউ জানলে আমাকে অবশ্যি জানাবেন)। শেষে এক বাঙ্গালী ভাবীর কাছ থেকে কিছুটা পাঁচ ফোড়ন নিয়ে আসলাম। সব যোগাড় হয়েছে, মনের আনন্দে ওকড়া কাটাকাটি করলাম। স্যল্মনেলার (Salmonella) ভয়ে সব কিছুই কাটার পরে আরেকবার ধুয়েনি আমি, ওকড়া ধুচ্ছি আর আঠার মত করে কষ বার হচ্ছে , যত ধুচ্ছি তত বেশী বার হচছে । আবার আম্মুকে ফোন দিলাম...আমার কথা শুনে আম্মুর হাসি আর থামে না।

আমি জানতাম না যে ঢেঁড়শ কাটার পর পানি দিতে হয় না।


হালিম

কুরবানী ঈদে এক ভাবীর বাসায় হালিম খেয়ে , কলাবাগানের মামা হালিমের কথা মনে পড়ে গেল। ঠিক করলাম আমরাও হালিম রান্না করবো। রন্ধন পদ্ধতি খুবই সহজ, দোকান থেকে হালিম মিক্স কিনে, পরিমান মত পানি মিশিয়ে জ্বাল দাও। কিন্তু এভাবে রেডিমেড হালিমে , মামা হালিমের স্বাদ খুঁজে পাওয়া শক্ত, খেতে অনেকটা লিন্টিন স্যুপের মত হয়।
আর শর্টকাট না, হালিম বানাবো গোড়া থেকে। সিদ্দীকা কবীর নিরাশ করলেন না এবার। রেসিপিটা ও তেমন কঠিন না তবে সময় সাধ্য। সব উপকরণ যোগাড় করে চড়িয়ে দিলাম। কিন্তু একি? হালিম কেবল পরিমানে বেড়েই চলেছে!! পাত্র বদলিয়ে বড় পাত্রে দিলাম, তাতেও হল না , পাত্র উপচিয়ে পড়ে যাচ্ছে। আমার বাসায় এর চেয়ে বড় কিছু নাই। পাশের বাসায় গেলাম বড় পাত্র ধার করতে।, বিশাল পাত্র নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখি , পুলিশ।
পড়ে যাওয়া হালিম পুড়ে স্মোক এ্যলার্ম বাজতে শুরু করায় পুলিশ চলে এসেছে। সে যাত্রায় পুলিশ শুধু সতর্ক করে দিয়েছিল, কিন্তু ঐ পোড়া দাগ তুলতে পুরো একটা লাইসল শেষ ।
এত কিছুর পরও, আমার নিত্য নতূন রান্না নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা একটুও কমেনি । ভাবছি এবার বিরিয়ানী রান্না টা শিখে ফেলব।


প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন ২০০৮-০৮-০৮

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।