Skip to main content

হুমম্‌

প্রথম দিন শেষ না হতেই বুঝতে পারছি, ঝোঁকের বশে ৫ দিনের ছুটিটা নেয়া ঠিক হয়নি। একে হাতের অবস্থা ভাল না, কাজ না করলে তো পয়সা নাই! ছুটিতে করার মত ও কিছু নাই। অবশ্য অফিস থাকলেও যে খুব কিছু করি তা নয়।
কদিন ধরে ভীষণ গল্পের বই পড়ছি। একটার পর একটা বই ডাউনলোড করছি, প্রিন্ট করছি এবং পড়ছি।
আমার আগের সেই বই পড়ার নেশা ফিরে এসেছে। এটা ভাল না মন্দ সেটা সিদ্ধান্ত নেবার সময় এখনও আসেনি। তবে অতীত অভিজ্ঞতার কারনে কিছুটা আশংকাতে আছি।


বইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক খুব ছোটবেলার। নানা রঙের ছবির বই গুলো ছিলো অসম্ভব প্রিয়। আরেকটু বড় হয়ে যখন পড়তে শিখলাম, তখন ঠাকুমার ঝুলি আর উপেন্দ্রকিশোরের রুপকথার রাজ্যে নিমিষেই হারিয়ে যেতাম। আমিই কঙ্কাবতী , আমিই সিন্ডারেলা। সেভাবে কমিকসের ভক্ত হয়ে উঠতে পারিনি কখনো, তবে হাতের কাছে পেলে বাদ যেত না চাচা চৌধুরি, নন্টে ফন্টে, টিনটি্ন, ফ্যান্টম।
এরপর পরিচয় হল তিনগোয়েন্দা, ফেলুদা, শাহরিয়ার কবীরের বইয়ের সাথে। বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম থাকায় বই-ই ছিলো আমার খেলার সাথী। মনে আছে শরত্চন্দ্রের ছোটদের “রামের সুমতি” পড়ে কি ভীষণই না কেঁদেছিলাম। পরে বিটিভিতে “রামের সুমতি” সিনেমাটা দেখে আরেকদফা কান্না।

প্রচুর বই পড়লেও আমি এক বই কখন দু’বার পড়িনি। নতুন বই এ টান পড়তো প্রায়ই; আর তখন হাত চলে যেত বাবা কিংবা বড় আপর সংগ্রহে। সেসব বই যেহেতু আমার পড়ার নিষেধ ছিলো , তাই পড়তে হত লুকিয়ে। বাসায় সে সুবিধা ছিলো না , ঘরের দরজা বন্ধ করলেই মা ভাবতেন দুষ্টামি করছি। তাই রোজ একটা বই চুরি করে নিয়ে যেতাম স্কুলে। ক্লাসের ফাঁকে, টিফিনের ছুটিতে পড়তাম। ঘুম পাড়ানি ইস্লামিয়াত বা কৃষিবিজ্ঞান ক্লাসে স্যারের চোখ এড়িয়ে বই পড়ে যেতাম। ধরাও পড়েছি দু’চারবার। প্রতিবারই ভাল ছাত্রীর তকমা গায়ে থাকার জন্য, বাড়িতে জানাজানি হয়নি।

কখনও আমি গর্ভধারিনীর জয়িতা হয়ে সমাজ বদলে দিচ্ছি, বা রূপা হয়ে হিমুর জন্য কষ্ট পাচ্ছি। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আসিমভের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আর এক্স-ফাইলসের মোল্ডার, স্কালি তো আমাকে তো প্রায় পৃথিবীর বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলো। এভাবে সবাই ষড়যন্ত্র করে কখন যে আমাকে, খুব কাছের বন্ধুদের থেকে বহু দূরে সরিয়ে নিল; আমি একটুও টের পাইনি। আজ ফেসবুকে পুরানো বন্ধুদের ছবিতে নিজেকে দেখি না তাই। মনটা খারাপ হয়।মনে আছে, একসময় কতটা বন্ধুহীন হয়ে পড়েছিলাম শুধু বই পড়ার কারণে। বর্তমানের সার্বক্ষনিক সঙ্গী চশমাটাও সে সময়েরই উপহার।


কলেজে উঠে পড়ার চাপে, আস্তে আস্তে বই পড়া কমতে থাকে। আরেকটা কারণ হয়তো তখন লুকিয়ে বই পড়ার দরকার ফুরিয়ে গিয়েছিলো। পড়ার বইয়ের ভাঁজে, শিক্ষকের দৃষ্টি এড়িয়ে ক্লাসের ফাঁকে বই পড়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে। বই পড়া কমার সাথে বাড়তে থাকল বন্ধুর সুংখ্যা। ততদিনে শিখে গেছি প্রক্সি দেয়া। ক্লাস পালিয়ে আলমের দোকানের চা, দল বেধেঁ টিএসসির আড্ডা, চারুকলায় সিনেমা দেখাটা ছিলো প্রতিদিনের ঘটনা। দেশের বাইরে এসেও বন্ধুভাগ্যে ভাটা পড়ল না। কত সহজে অচেনা দেশের ভাল মানুষ গুলো আমাকে আপন করে নিলো। দেশী, বিদেশী, সহপাঠি, সহকর্মী সবাই যেন আমার অনেকদিনের পরিচিত। তাদের মাঝে নতুন এসে নিজেকে একটুও বিসদৃশ লাগেনি। প্রবাসের একাকী সম্যসাবহুল জীবনে , এই বন্ধুরাই আমাকে সাহস, অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।

প্রতি সপ্তাহান্তেই আড্ডা, উনো, পিক্সেনারী খেলা, বাংলাদেশ নাইটের রিহার্সেল, দল বেধেঁ দাওয়াত, কন্সার্ট, ঘুরে বেড়ানো… সব মিলিয়ে দারুন একটা সময়।
এর মাঝেই উটকো ঝামেলার মত সুনীল গাঙ্গুলি আমার ঘাড়ে চেপে বসেছে। বাদ পড়ছে একের পর এক বন্ধুদের আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া; বন্ধুরা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে, আমার আচরনে। কিন্তু আমি ডুবে যাচ্ছি বইয়ের মাঝে। বরুণা হয়ে সুনীলের হাত ধরে সব কিছু ফেলে পালিয়ে যাচ্ছি; জানিনা কোনদিকে…

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।