Skip to main content

ঘরে ফেরা হয় না


ভাবটা এমন বিদেশ এসে গ্যেছেন বিরাট ফেঁসে
তার পরও কেউ কেন জানি ফিরতে নারাজ দেশে।
- রোমেন রায়হান


আমারিকার সাথে প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটা অম্ল-মধুর সম্পর্ক আছে। তারা যেকোনো দেশী আড্ডাতে করুণ মুখে গল্প করবেন- আহা দেশে কত ভাল ছিলাম! সকালে মরজিনা চা বানিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতো… সাথে সাথে পাশ থেকে দুচারজন স্বপ্নময় দৃষ্টিতে বলবেন - মায়ের আচার আর পুদিনার চাটনি।সেখান থেকে নিত্য নতুন রেসিপি সংগ্রহ। তখন আমি নতুন এসেছি, ঠিক অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি এসব আড্ডাতে। মায়ের সাথে যাই…তাই এসব আলোচনাতে অংশ নেয়ার খুব একটা দরকার পড়ে না। শুধু শ্রোতা হয়ে শেষ রক্ষা হল না, কদিনের মধ্যেই মার কাছে নালিশ আসা শুরু হল, “আপা আপনার মেয়েটা এত্ত অহংকারী…”। এরপরের ঝারির পরিমাণ বলাই বাহুল্য।

পরের আড্ডাতে তাই বলেই ফেললাম, তো দেশে ফেরত গেলেই তো হয়? এটা শুনে তারা এমন ভাবে আমার দিকে তাকালেন যেন আমি এই মাত্র অন্য কোন গ্রহ থেকে এইমাত্র আমেরিকাতে অবতরণ করেছি। তারপর যেন আমাকে এ দৃষ্টি থেকে বাঁচাতে সবাই একসাথে বলতে লাগলেন “ দেশে কিভাবে মানুষ থাকে, লোডশেডিং, জ্যাম, ছিনতাই…”।

ফিরে আসার পথে ভাবি এত কষ্টের প্রবাসে থাকার জন্য বাঙালী কেন এত উতলা? সবাই বলে দূঃখের কথা তবু কেন দেশের সোনার সন্তানরা দেশে ফেরত যেতে চায় না?
কারণ অবশ্য সহজ সরল। মোটা মাইনে আর অবাধ স্বাধীনতা। এক্ষত্রে বাংলাদেশিদের দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রতিষ্ঠিত তথা চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, সবুজপাতাধারী এবং ছাত্র।

প্রতিষ্ঠিতরা দেশে ফেরত যেতে চান না তার কারণ হিসাবে বলেন, দেশে গিয়ে কি করব? ছেলে মেয়েরা গরম সহ্য করতে পারে না, ভাল স্কুল কলেজ নাই, হামানা হামানা…
আমি বলি, ভাই আপনি যদি গ্রামের স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করে আমেরিকাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন, আপনার ছেলে মেয়ে কেন পারবে না??
ভাবীদের ভাবনা আরও খোলামেলা, “আমি বাবা, ওই বুড়ি শ্বশুরি আর ননদের মুখ ঝামটা খেতে পারবো না। অনেকে আবার একটু রেখে ঢেকে বলেন “এখানে জীবনের নিরাপত্তা আছে…”।

এবার আসি দ্বিতীয় গ্রুপে, যারা এফ-ওয়ান(F1) ভিসা নিয়ে আসে। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। এদের বেশীরভাগের স্বপ্ন কিভাবে সবুজ়পাতা পাওয়া যায়। এরা দেশে ফিরতে চায় না তার প্রধান কারণ ভীষন চড়া ট্যুইশন। যা দিতে অনেকের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে, কেউ আবার চড়া সুদে ছাত্র লোন নেয়। পড়া শেষে ভাবে, যত টাকা খরচ করে পড়লাম, তার খানিকটা অন্তত তুলে নিয়ে যাই। সময়ের সাথে সাথে খানিকটাই , সবটা, আরেকটা হয়ে যায়…

বাঙালীর আর ঘরে ফেরা হয় না… দেশ আর দেশবাসীর সাথে দূরত্ব যেন দেশপ্রেমকে আরও গাঢ় করে তুলে। আমরা আক্রান্ত হই দুঃখ বিলাসে। একটু বাংলা কথা বলার জন্য অপরিচতকে আপন করেনি, নতুন বাংলা গানের জন্য ঘুরে বেরাই youtube আর polapain.com, দেশের খবর জানার জন্য পরে ফেলি ৩-৪ তা দৈনিক পত্রিকা, নতুন বইয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াই নানা পাইরাটেড সাইট গুলোতে।
ঠিক তখনি বুঝে যাই দেশী আড্ডার করুণ মুখের স্মৃতিচারনের কারণ।


প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন ২০০৮-০৪-০৬ (পরিমার্জিত)

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।