Skip to main content

জল চিকিৎসা

কদিন হল প্যাট্রিক খুব খুশী খুশী মুডে আছে, নিশ্চয়ই স্টেফানির সাথে ডেটটা দারুণ হয়েছে।
জিজ্ঞেস করতেই বলল-
- কোন স্টেফানী?
- মর জ্বালা! যার সাথে একটা ডেটের জন্য এমন আদা জল খেয়ে পরেছিলে তার নাম পর্যন্ত মনে পরছে না?
ভাল মুডের কারনেই কি না জানি না, এখন আমার খোঁচা প্যাট্রিকের গায়েই লাগলো না।
ঊল্টো জানালো সে নাকি দারূণ এক লাইফ কোচের দেখা পেয়েছে; এরপর নাকি অর জীবনের মোক্ষই বদলে গেছে।

লাইফ কোচের সাথে আমেরিকানদের সম্পর্ক অনেকটা আমাদের দেশের পীর –ফকির- বাবা দের মত। তবে এরা ঠিক ভুত – ভবিষ্যত বলতে পারে না।তারা জীবনের সহজ সত্যগুলো , সুন্দর করে মনে করিয়ে দেয় , আর বিনিময়ে কাড়ি কাড়ি টাকা নেয়।
প্যাট্রিকের এসব খেয়ালের সাথে আমি পরিচিত, তাই খুব একটা পাত্তা দিলাম না। কদিন পরে এসেই বলবে- “ব্যাটা এক নম্বরের জোচ্চোর!”

সেদিন আমার ভীষন মাথা ব্যাথা করছে, এরমাঝে ফোনটা টানা বেজে যাচ্ছে। ধরতেই প্যাট্রিকের গলা, দারুণ উত্তেজিত...
সে নাকি এক জল চিকিতসা শিখেছে ওর লাইফ কোচের কাছ থেকে, এতে নাকি ডায়াবিটিস থেকে আরম্ভ করে পেটের ব্যাথা পর্যন্ত, সব সারে। সোজা বাংলায় সর্ব রোগের মহা ঔষধ ।
- তো গুলিস্তানের মোড়ে ক্যানভাসের ব্যাগটা নিয়ে বস না বাপু?
- কি?
- কিছুনা , আমার মাথা ধরেছে।
- ওহ! তাইলে তুমি বিশ্রাম নাও... আমি পরে ফোন করব।
মনে মনে বলি যাহ ভাগ! আমি মরি মাথার যন্ত্রনায়...

জল চিকিতসার কথা শুনে প্রথমেই মনে হল, বহুব্রিহী নাটকের সেই মামার কথা; এক পা গরম পানির বালতিতে , অন্য পা ঠান্ডা পানির বালতিতে ডুবিয়ে বাতের চিকিতসা।
পরদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম , বল তোমার জল চিকিতসা; এতে যদি আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা ভাল না হয়, তাইলে আমি তোমার লাইফ কোচকে জেলে ভরবো। তাতে প্যাট্রিককে খুব একটা চিন্তিত মনে হল না; সে ১০০% ভাগ নিশ্চিত এ চিকিতসাতেই মাইগ্রেন কেন ক্যান্সারো পালাবে।
চিকিতসা পদ্ধতিও তেমন কঠিন কিছু না...
- সকালে ঘুম থেকে উঠে খলি পেটে ৪ গ্লাস (১.৫ লিটার)পানি খেতে হবে।
- পরবরতী ৪৫ মিনিট কিছু খাওয়া যাবে না, তবে দাতঁ মাজা যেতে পারে।
- এরপর নাস্তা করে তার পরের দু’ঘন্টা কিছু খওয়া যাবে না।
- দুপুরে এবং রাতের খাওয়ার পরের দুঘন্টাও কিছু খাওয়া যাবে না।
- চিকিতসা চলাকালীন সময়ে কোন প্রকার অ্যাল্কোহল খাওয়া যাবে না।

ভাবছি জল চিকিতসা শুরু করবো। কিন্তু মুশকিল হল সকালে এক সাথে ৪ গ্লাস পানি খাওয়াটা । পাঠকও চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন ২০০৮-০৭-০৯

Comments

Popular posts from this blog

টোনা টুনির গল্প

এক দেশে ছিলো এক টোনা আর এক টুনি। এক ছুটিরদিন সকালে টোনা, টুনিকে ডাকিয়া কহিল -“টুনি ভাপা পিঠা খাওয়ার শখ হইতেছে।” শুনিয়া টুনি ফ্রিজ খুলিয়া দেখিল, কেবল শুকনো রুটি আর পনির পড়িয়া আছে। টুনি বলিল – -“ফ্রীজে কিছুই নাই। বাজার হইতে ভাপা পিঠা রাধিঁবার সরঞ্জাম লইয়া আস। - টোনা শুধায় “কি কি লাগিবে ফর্দ দাও।” টুনি পড়িল মহা চিন্তায়, ভাপা পিঠা কি উপায়ে রাধেঁ , কি কি লাগে সবই তো তার অজানা। ভাবিতে ভাবিতে ঘরের কোণায় যত্ন করিয়া রাখা দেশ বিদেশের পিঠা বইখানি টানিয়া লইলো। তাহা হইতে যাহা যাহা দরকার সব লিস্ট করিয়া টোনাকে দিয়া বলিল – “তাড়াতাড়ি এইসব লইয়া আস।” বিরস মুখে বাজারের থলি হাতে টোনা বাহির হইল। টুনি ভাবে, মায়ের কাছ থেকে ভাল উপায়ে ভাপা পিঠা রন্ধন প্রনালী শিখিয়া নেয়া দরকার। মাকে ফোন করিয়া ঘটনা জানাইতেই তিনি টোনার উপর যারপর নাই চটিয়া গিয়া কহিলেন- -“টোনা তাহার কন্যা কে পাহিয়াছে কি? ছুটির দিনেও রান্নাঘর থেকে ছুটি দিতেছে না।” অবস্থা বেশি সুবিধার না আঁচ করিয়া টুনি ফোন রাখিয়া দিয়া ভাবিল শ্বাশুড়িমাতার কাছ থেকেই না হয় শিখিয়া লওয়া যাক। ঘটনা শুনিয়া শ্বাশুড়িমাতা “টোনার দুর্ভাগ্যের জন্য যারপর নাই দুঃখ প্রকাশ করি

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায়...

হাড়ে হাড়ে চিনি তোমায় কচু ভালোবাসো আমায়' আমার লগে কর অভিনয়... জানি তুমি, চক্ষু দু’টা বাইন্ধ্যা রাখস্‌ সামনের বাড়ির জানালায়।। ফাজিল মাইয্যার নাম কি জানি, শিবানী না কি সর্বানী, মাইয্যার চোখে মুখে জ্বলে রাশি রাশি শয়তানি। রাশি রাশি শয়তানি রে… ইশারাতে চলতাছে চলুক, লোকে বলতাসে বলুক। আমার সংসারে যদি আগুন জ্বলে তবে, রিপোর্ট করব চাচার থানায়, প্রেম কর বইয়া জেলখানায়। মনে রাইখো এই কথাটি, প্রেম কইরা করস বিয়া, তোমের ঘরে আইলাম আমি, সব কিছু ছাইরা দিয়া, সব কিছু ছাইরা দিয়া হায়!! সেই মনুমেন্টের নিচে বইয়া, ফুচুফুচু কথা শুনাইয়া, আও গ্রাম ঘাটের ধারে, প্রথম প্রেমের কবিতা পইড়া, আমারে পাগোল বানাইলেও, পরাণ হয় পাগোল, উঁকিঝুকি মাইরো না আর, ছিঃহ্‌!! এ সকল কি তোমার মানায়??

ভাবনাগুলো এলোমেলো

সবকিছু বড্ড বেশী ধোঁয়াশা লাগে আজকাল।  পৃথিবী নতুন লাগছে। নাকি আমিই হয়তো বদলে গিয়েছি। কিংবা আমি না সময়টাই বদলে গিয়েছে। গতকাল একটা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বয়সের ঘরটা্র  পরিবর্তন হয়েছে।  বদলে গিয়েছে আরো অনেক কিছুই। সবাই সেমেষ্টার  ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আমার স্কুল নেই, বই নেই, পরীক্ষা নেই। কখনো ভাবিনি পরীক্ষা নেই বলে অফসোস করবো !!! হয়তো আমিই বদলে গিয়েছি অনেক বেশি। জীবনে এসে পড়েছে অনেক দায়িত্ব। অচেনা কিছু মানুষ নতুন সম্পর্কের টানে আপন হয়ে উঠেছে; আবার আপন কিছু মানুষ অদ্ভূত নির্লিপ্ততায় দূরে সরে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের মাঝে ঢুকে গিয়েছে  হিসাব নিকেশ, অনেক প্রত্যাশা আর  হতাশা। আর ঠিক এক সপ্তাহ পরে চলে যাচ্ছি নতুন একটা শহরে।  অনিশ্চিত জীবনে।  আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো এই চেনা শহরে, কিন্তু তখন কী আজকের চেনা মানুষ গুলো এমনই থাকবে?? সব পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছি।